(ভিডিও)ব্যবসায়ীর ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধার: র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি শামীমার চাঞ্চল্যকর তথ্য

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),রাজধানীর কাওরান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টার প্রতিনিধি, শনিবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ :

প্রমিকাকে দিয়ে হানিট্র্যাপে ফেলা হয়েছিল রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে। নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় ১০ লাখ টাকা। আর এ টাকা না পেয়েই আশরাফুলকে হত্যা করে জরেজ ও তার প্রেমিকা শামীমা।

Advertisement

 

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর কাওরানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় ব্যবসায়ী আশরাফুল হক তার ব্যবসা-সংক্রান্ত পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে একই গ্রামের বাসিন্দা বন্ধু জরেজুল ইসলামের সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় রওনা করেন। পরদিন সকাল থেকে তার পরিবার ভিকটিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পায়। পরবর্তীতে গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট কাছে পানির পাম্প সংলগ্ন দুটি নীল রঙের ড্রামে অজ্ঞাতনামা পুরুষের ২৬ খণ্ডের মরদেহ রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। শাহবাগ থানা পুলিশ লাশের হাতের আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করে অজ্ঞাত লাশটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের। রাতে ভিকটিমের বোন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করলে র‌্যাব মামলাটির রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজুলের প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি শামীমা আক্তারের দেয়া তথ্যমতে ও তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণে জানা যায় হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি জরেজুলের সাথে তার এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায় তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে, যা জরেজ ৭ লাখ টাকা নেবে এবং শামীমা ৩ লাখ টাকা ভাগ করে নেবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা ভিকটিম আশরাফুল ইসলামের সাথে একমাস আগে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ ভিকটিম আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা করে। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজুল ও আশরাফুল শামীমার সাথে দেখা করে ঢাকা মহানগরীর শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে বাসায় ওঠেন। রংপুর থেকে ঢাকায় আসার পূর্বে জরেজুল তার প্রেমিকা শামীমা আক্তারকে ফোনে জানায় ভিকটিম আশরাফুলের সঙ্গে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

 

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম আশরাফুলকে মাল্টার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে, যাতে বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে না পারে। পরবর্তীতে যখন একান্ত সময় কাটায় তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করে। উক্ত ভিডিও শামীমার মোবাইল থেকে ভিডিও ধারণ করা হয়, যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে।

শামীমার দেয়া তথ্যমতে ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মুখ স্কসটেপ দিয়ে আটকে দেয়। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ স্কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনা স্থলেই আশরাফুল মারা যায়।

লাশ একই ঘরে রেখে জরেজ ও শামীমা রাত্রীযাপন করে এবং তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। আশরাফুলের মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে গত ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজ নিকটস্থ বাজার হতে চাপাতি ও ড্রাম কিনে আনে। জরেজ চাপাতি দিয়ে লাশ ২৬ টুকরা করে দুইটি নীল রঙের ড্রামে ভরে রাখে। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে একটি সিএনজি ভাড়া করে ড্রাম দুটি সিএনজিতে নিয়ে দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে বাসা হতে রওনা করে। পথে তারা ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা চিন্তা করে সিএনজি পরিবর্তন করে অন্য একটি সিএনজিতে রওনা করে। দুপুর ৩টা ১৩ মিনিটে হাইকোর্ট মাজার গেইটের নিকট আসলে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখে লাশভর্তি ড্রামদুটি হাইকোর্টের পানির পাম্প সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশে একটি বড় গাছের নিচে ফেলে তারা অতিদ্রুত হাইকোর্ট এলাকা হতে একটি অটো যোগে সায়েদাবাদ চলে যায়।

সায়েদাবাদ যাওয়ার পর জরেজ শামীমাকে কুমিল্লায় তার নিজবাড়িতে চলে যেতে বলে এবং সে রংপুর তার নিজের বাড়িতে চলে যাবে বলে শামীমাকে জানায়। সে অনুযায়ী শামীমা কুমিল্লা তার নিজ বাড়িতে চলে যায় এবং জরেজের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। শামীমার দেয়া তথ্যমতে ভিকটিম আশরাফুলের রক্তমাখা সাদা রঙের পায়জামা-পাঞ্জাবিসহ হত্যার কাজে ব্যবহৃত দড়ি, স্কসটেপ, একটি গোলগলা গেঞ্জি এবং একটি হাফ প্যান্ট একটি বস্তার ভেতর মুখবাধা অবস্থায় শনির আখড়াস্থ নূরপুর এলাকা হতে র‌্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল উদ্ধার করে।

Advertisement

শামীমার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্লাকমেইল করে টাকা উপার্জন করাই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে পূর্বশত্রুতা আছে কি না, তা মূল আসামি জরেজকে জিজ্ঞাসা বাদে বেরিয়ে আসবে বলে জানায় র‌্যাব।