ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার প্রতিনিধি, বুধবার ১২ নভেম্বর ২০২৫ || কার্তিক ২৮ ১৪৩২ :
জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলেন পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাইফ মামুন। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই আরেক সন্ত্রাসী তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এজন্য ২ লাখ টাকায় ফারুক ও রবিন নামে ২ শুটারের সঙ্গে চুক্তিও করেছিলেন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ফারুক, রবিন, শামীম, রুবেল ও ইউসুফ। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ছাড়াও অস্ত্র, অব্যবহৃত গুলি ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফারুক ও রবিন দু’জন শুটার। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাতে নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে ফারুক ও রবিন ছাড়াও শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যার পর তারা সিলেট হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আসামিরা প্রথমে সিলেট থেকে ভারত প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। সেটি না পেরে পরে সাতক্ষীরা হয়ে সীমান্ত অতিক্রমের পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিলেট থেকে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাওয়ার পথে নরসিংদীতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের হেফাজতে রাখেন। আসামি রুবেল ভাড়ায় গাড়ির ব্যবসা করেন। পরবর্তীতে সে অস্ত্র ও গুলি আসামি ইউসুফের হেফাজতে রাখেন। মঙ্গলবার রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানে ইউসুফকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে পেশায় একজন দরজি। অভিযানে তার ঘরের মেঝে থেকে দু’টি বিদেশি পিস্তল ছাড়াও ৬টি গুলি ও দু’টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব একসময় প্রকট হয়ে ওঠে। এর জেরে কিছুদিন ধরেই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজামুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ রনি একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তবে ফারুকের সহযোগিতায় এসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সবশেষ গত সোমবার (১০ নভেম্বর) হিমেল হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে আসেন সাইফ মামুন। পরে ওইদিনকেই মামুনকে হত্যার জন্য বেছে নেয়া হয়।
শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় শুটার রবিনকে নিজ বাসায় ডেকে নেন রনি। ওই সময় রনি তাকে জানায়, তার সঙ্গে ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও কয়েকজন থাকবেন। তারা মামুনকে হত্যা করবেন। তবে সে সময় রনি রবিনকেও সঙ্গে থাকতে বলেন এবং তাকে টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেন। এতে রবিন রাজি হয়ে যান।
পরবর্তীতে ঘটনার দিন সকালে রনি কল করে সবাইকে আদালত এলাকায় আসতে বলেন। এরপর রবিন তার বন্ধু শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলযোগে আদালত এলাকায় গিয়ে হত্যায় অংশ নেন। ওই সময় অন্যরাও আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সুমন ও ফারুকের গুলি করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শুটার ফারুক ও রবিন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাইফ মামুনকে গুলি করেন।
Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, সাইফ মামুনের গতিবিধি অনুসরণ করে শুটার ফারুক ও রবিনকে খবর দেন কামাল। পরে সিগনাল পেয়ে তারা প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে মামুনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পরপরই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজার এলাকায় যান তারা। এরপর সেখানে রনির নির্দেশে ইউসুফের কাছে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি রেখে দেয়া হয়। পরবর্তীতে রনির নির্দেশে ফারুক ও সুমনকে ২ লাখ টাকা দেন রুবেল। এরপর তারা এক লাখ টাকা করে তা ভাগ করে নেন।



