আবরার হত্যার পর নীরবদের হঠাৎ সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্রনেতা আমির ইসলাম রহিম

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),বিশেষ  প্রতিনিধি, মঙ্গলবার   ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ||  আশ্বিন ২২ ১৪৩২ :

বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ ও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করা আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যার পর থেকে যাদের প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেই তথাকথিত “ছাত্রনেতাদের” কেউই মাঠে ছিল না। বর্তমান ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম কিংবা ফরহাদরা তখন ছিলেন সম্পূর্ণ নীরব, উদাসীন এবং অনুপস্থিত। অথচ তখন দেশের শিক্ষাঙ্গন উত্তাল ছিল ন্যায়বিচারের দাবিতে, রাজপথ ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে মুখর।

Advertisement

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের মেঘনা উপজেলা শাখার সভাপতি আমির ইসলাম রহিম বলেছেন, আবরার ফাহাদের হত্যার পর থেকে যাদের কণ্ঠে প্রতিবাদের স্লোগান শোনা যাওয়ার কথা ছিল, তাদের কাউকেই দেখা যায়নি। কোনো প্রতিবাদ, কোনো কর্মসূচি, কোনো আন্দোলন তারা করেনি। কিন্তু আজ বহু বছর পর হঠাৎ করেই তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে, নানা কর্মসূচি আয়োজন করছে। এতে ছাত্র সমাজ ও সচেতন মহলের মনে বড় প্রশ্ন জাগছে — এতদিন তারা কোথায় ছিল? কেন তখন আবরারের রক্তের বিচার চাইতে মাঠে নামেনি? ন্যায়বিচারের লড়াই হত্যার পরপরই শুরু হওয়ার কথা ছিল, আজ এত বছর পর নয়।

আমির ইসলাম রহিম আরও বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আবরার হত্যার পর ন্যায়বিচারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ভাই। তার নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল, শহীদ আবরারের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। অথচ আজ সেই নুর ভাইকে কোনো দাওয়াত না দিয়েই বর্তমান ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বিভিন্ন দোকানের মালিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে প্রোগ্রাম করছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, এটি প্রকৃত ন্যায়বিচারের আন্দোলন নয়, বরং ব্যক্তিগত প্রচারণার একটি কৌশল।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

 

তিনি আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এছাড়াও এনসিপির সদস্য সচিব আখতার ভাই, যিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন এবং আন্দোলনের প্রথম সারির একজন, তার রাজনৈতিক পদবিও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এটি কোনোভাবেই শোভনীয় নয় এবং এতে আন্দোলনের প্রতি অসম্মান প্রকাশ পায়।

আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমির ইসলাম রহিম বলেন, শুনে রাখুন সাদিক ভাই, আবরার ফাহাদের হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে আমরা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ২৪ জন নেতাকর্মী ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছি, রক্ত দিয়েছি এবং জেল খেটেছি। আমাদের নেতারা, বিশেষ করে আখতার ভাই ও নুর ভাইসহ অনেকেই তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলে আন্দোলন করেছেন। তারা এই সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। আজ যারা তখন নীরব ছিল, তারা যদি সেই ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাসকে অস্বীকার করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়, তবে তা শুধু লজ্জাজনকই নয়, বরং বিশ্বাসঘাতকতারও শামিল।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। ন্যায়বিচারের আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত প্রচারণার মঞ্চ নয় — এটি শহীদের প্রতি দায়িত্ব, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অঙ্গীকার। যারা সেই সময়ে নীরব ছিল, তারা আজ হঠাৎ করে মাঠে নেমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। জনগণ এখন জানতে চায় — তাদের উদ্দেশ্য কী? তারা কি সত্যিই ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছে, নাকি নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত হিসাব মেলাতে মাঠে নেমেছে?

Advertisement

আমির ইসলাম রহিম আরও বলেন, আবরারের হত্যার ন্যায়বিচার শুধু একটি পরিবারের দাবি নয়, এটি সমগ্র জাতির দাবি। যারা তখন রাজপথে ছিল না, তারা আজ আন্দোলনের মালিক সেজে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছে। আমরা তা হতে দেব না। শহীদ আবরারের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে ত্যাগী নেতাদের অবদানকে স্বীকার করতে হবে এবং প্রকৃত আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।