(ভিডিও) পঞ্চগড়ে চা বাগানে মিশ্র ফল চাষে সাফল্য, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তার নতুন দিগন্ত

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),পঞ্চগড় প্রতিনিধি,বুধবার   ০১ অক্টোবর ২০২৫ ||  আশ্বিন ১৬ ১৪৩২ :

অর্গানিক মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের বাণিজ্যকে কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠেছে উদ্যোক্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের। জেলায় উৎপাদিত এসব ফসলের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের বিভিন্ন  প্রকল্পের আওতায় এনে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদন মুখি করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের সমতলের চা বাগান গুলোতে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ছোট বড় অসংখ্য মাল্টা গাছ। চা বাগানে মিশ্র ফলের বাগান হিসেবে গড়ে উঠেছে মাল্টা আম, লটকন,  সুপারি ও পানের বাগান। আর এসব ফসল উৎপাদিত হচ্ছে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে অর্গানিক উপায়ে। এতে করে ভোক্তাদের কাছে অর্গানিক ফলের চাহিদা বাড়ায় চাষিরাও দাম ভালো পাচ্ছে। এক জমিতে একাধিক ফসল পেয়ে  দ্বিগুণ লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

Advertisement

সীমান্ত জেলা পঞ্চগড় সমতলের চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে অনেক আগেই। সমতলের মাটি চায়ের উপযোগী হওয়ায় দ্রুতই বাড়ছে চা বাগানের সংখ্যা। তবে আপদকালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে এ জেলার চাষিরা এবার সমতলের চা বাগানে মিশ্র ফলের বাগান হিসেবে মাল্টা, হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা জাতের ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। মৌসুমের শুরুতে এসব ফলের গাছে মুকুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার শুরু করেন চাষিরা। প্রতিটি গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয় সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদসহ অর্গানিক ফল উৎপাদনের নানা উপকরণ। এতে করে চাষিদের পরিশ্রম হয়েছে সফল। বর্তমানে জেলার এসব চা বাগানে বিভিন্ন ফলের গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে নানা জাতের ফল। বাগানগুলো থেকে শুরু হয়েছে মাল্টা  পেঁপে, কলা সংগ্রহ। জেলার ব্যবসায়ীরা বাগানে গিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছে এসব ফল।

জেলা ও দেশের বিভিন্ন পাইকারি আড়ৎ কিংবা কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে  এসব ফল। মৌসুম ভেদে সারা বছরেই চাষিরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে দেশীয় ফলের চাহিদা মিটছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলার বিল্লাভিটা এলাকার আদর্শ চাষি কাজী আনিসুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে বড় আকারে চা বাগানে সাথি ফসল হিসেবে তিনি মাল্টা এবং আম চাষ শুরু করেন। পরের বছরেই আশাতীত ফলন দেখে তেঁতুলিয়ার সকল চা চাষিরাই এখন তাদের চা বাগানে মাল্টা এবং আম চাষ করছে। চা বাগানের এই ফল কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে ক্রেতা।

এদিকে জেলায় মাল্টা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে উদ্যোক্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা উপায়ে ভোক্তা পর্যায়ে মাল্টা সরবরাহ করছে বেশকিছু উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান। এমনই একজন উদ্যোক্তা তেঁতুলিয়ার জাফর ইকবাল। বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের এই উদ্যোক্তা ২০১০ সালে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করার পরে চাকরির পিছনে ঘুরেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ১৫০ শতক জমিতে ২০২১ সালে লেবু জাতীয় ফলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় বারী মাল্টা-১ জাতের ৪৫০টি মাল্টাগাছ রোপণ করেন। চা বাগানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ২ বছরের মাথায় তিনি এই বাগান থেকে ২ লাখ টাকা আয় করেন। সাইজ ভেদে ১৮০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করেন মাল্টা। চলতি বছরে তার বাগানে আশাতীত ফল এসেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় বাজারে তিনি ১ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। সারা মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হবে এমন আশা করেছেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকার দেড় শতাধিক সৌখিন চাষি তাদের চা বাগানসহ পরিত্যক্ত জায়গায় মাল্টার আবাদ করে আসছেন।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৪নং কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের সফল ফল চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, কৃষির মধ্যে যে রোমাঞ্চ রয়েছে তা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। একজন ভালো কৃষক নিজের এবং দেশের জন্যে অনেক কিছু করতে পারে, যদি সে মননশীল হয়। ৬ সন্তানের জনক আবু বক্কর নিজের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। জীবন জগতে তিনি একা থাকলেও কৃষির এই শৈল্পিকতা তাকে ব্যস্ত করে রেখেছে। নিজের হাতে উৎপাদিত ফসল তার অবসর জীবনের একমাত্র সুখ। শুধু নিজের জন্যে নয়, তার এই কৃষি বিপ্লবে তিনি তৈরি করেছেন অনেক অসহায় মানুষের কর্মক্ষেত্র। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমির চা বাগানের সঙ্গে মাল্টা, আম, লটকন, সুপারি, পান, লেবুসহ সবজির আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। চলতি মৌসুমে তার বাগান থেকে তিনি ৫ লাখ টাকার বিভিন্ন ফল বিক্রি করেছেন।

দৃষ্টিনন্দন এসব অর্গানিক উপায়ে উৎপাদিত ফলের বাগানে কাজ করে নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার ভালোই চলছে বলে জানালেন স্থানীয় শ্রমিকরা।

পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, কৃষকদের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এনে বিষমুক্ত অর্গানিক ফল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এসব অর্গানিক ফলের বাগানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

Advertisement

চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য মাল্টা বাগান। তবে সমতলের চা বাগানে মিশ্র ফলের বাগান গড়তে চাষিদের আর্থিক সহায়তা সৃষ্টি করতে পারলে চাষিরা আর্থিকভাবে দ্বিগুণ লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পঞ্চগড়ে চা বাগানে মিশ্র ফল চাষে সাফল্য। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম