২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), কক্সবাজার   প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার   ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ৩০ ১৪৩১ :

কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

Advertisement

আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিরাজ উল্লাহ। গত বছরের ৩ জুলাই এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলা: ঘষামাজা করে নিজের নাম কেটে দেন সাবেক ডিসি’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আদালত সূত্র জানায়, বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নিজের নাম কেটে দেন প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন অপর চার আসামি। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।

দুদকের কক্সবাজার আদালতের আইনজীবীরা জানান, মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। গত জুলাই মাসে তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় আসামি করা হয় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে। মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমানের নামে।

মাতারবাড়ীতে তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। চিংড়িঘেরের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা, যা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় পরের দিন মামলা হয়।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীর আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব কাগজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। ওই দিন আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুহুল আমিনসহ ২৮ জনের নামে আবেদনটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের (অনুসন্ধান ও তদন্ত) পরিচালক বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। পরে প্রধান আসামি রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমকে প্রধান আসামি করা হয়। আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষর দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

Advertisement

উল্লেখ্য, আগের একটি দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ফাইল ছবি