ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি,মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ || মাঘ ১৪ ১৪৩১ :
বেশ কিছু দাবিতে দেশব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে বন্ধ রয়েছে সারা দেশের ট্রেন চলাচল। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছেন। রাত পৌনে ১টায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর আর কোনো ট্রেন যাত্রা করেনি। আগে থেকেই টিকিট কাটায় এবং ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর না জানায় যাত্রীরা স্টেশনে আসেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ১০০টিরও বেশি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৩৫০টিরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করে।
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মবিরতির কারণে এর সবগুলো বন্ধ রয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন থেকে খুলনার যাত্রী শহীদুল ইসলাম ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)কে বলেন, “আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। মধ্য রাত থেকে যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে এ খবর জানতাম না। রেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো বার্তা আমাদের জানায়নি। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন না চললে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো উচিত ছিলো। আবার টাকা কীভাবে ফেরত পাবো সেটাও জানি না।”
সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।
বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো. সাইদুর রহমান।
“এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। এরইমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে চিঠি চালাচালির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও চলছে।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই অবস্থায় তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল কর্মকর্ত-কর্মচারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।”
গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনের চালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
Advertisement
