কুমিল্লায় পুলিশের ধাওয়ায় যুবক নিহত।।৩ পুলিশ আটক

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,এস এম সালাহ উদ্দিন,কুমিল্লা প্রতিনিধি,১০ মার্চ : কুমিল্লা সদর উপজেলার চাঁপাপুর এলাকার বালুতুপার মোড়ে মোটরসাইকেল আরোহী  আবু তাহের নামে কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা শাহপুরের আবুল কাশেমের ছেলে অন্য একটি থানার পুলিশের গাড়ির ধাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশের মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দিয়েছে। ৪ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ১ পুলিশ কর্মকর্তা পালিয়ে গেলেও ৩ জনকে আটক করে পুলিশেই সোপর্দ করেছে।
পুলিশ বলছে, ভোর বেলা পুলিশের গাড়ির চালক ঘুমঘুমভাবে থাকায় মোটরসাইকেলটিকে দেখতে পায় নি। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকাল হয়ে যাওয়ায় লোকজন চলে আসায় তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা পুলিশের একটি মাইক্রোবাস এক মোটরসাইকেল আরোহী যুবককে ধাওয়া করে। এ সময় বালতুপা চাঁপাপুর এতিমখানা মোড়ে আমান ম্যানশনের পাশের মোড়ে মোটর সাইকেলটিকে মাইক্রোবাস চাপা দিলে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এ সময় পুলিশের গাড়িটিও রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খেতে খেতে পাশে পড়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা এ সময় মুঠোফোনে গাড়ি তোলার জন্য ‘র‌্যাকার’ আসতে বলে এবং নিহত যুবকের লাশ অন্তত ৩০ ফুট দুরে ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে ফেলে। ঘটনার পর পর আশে পাশের লোক দৌড়ে আসলে পুলিশ তাদেরকে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দূরে সরে যেতে বলে। ‘র‌্যাকার’ এসে মাইক্রোবাসটি তোলার পর পুলিশ সদস্যরা চলে যেতে চাইলে বিক্ষুব্ধ মানুষ পুলিশকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে আটক করে। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা পালিয়ে যায় এবং পুলিশের তিন সদস্যকে আটক করে। খবর পেয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের হাতে পুলিশ সদস্যদের সোপর্দ করে। ঘটনার পর পর কুমিল্লার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর সালেহীন ইমন, পিবিআই পুলিশ সদস্য, র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা, ফায়ার সার্ভিস,  ৬নং জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মামুনুর রশিদ মামুনসহ স্থানীয় লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
উত্তেজিত সাধারণ মানুষ পুলিশের সামনেই তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। কনস্টেবল মিজান, খোরশেদ ও কালাম নামে তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করে।
৬নং জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, প্রায়ই পুলিশ সদস্যরা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।
সদর দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নজরুল ইসলাম জানান,  লক্ষীপুর এলাকায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা এএসআই জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ওয়ারেন্টের আসামী ধরার অভিযান ছিল। অভিযান শেষে আসার পথে গাড়ির চালক কুয়াশার কারণে এবং ঘুমঘুম ভাব থাকায় ভালভাবে দেখতে পায়নি ফলে মোটর সাইকেল ও পুলিশের ব্যবহৃত গাড়িটি রাস্তা থেকে নিচে পড়ে যায়। ঐ মোটরসাইকেলে তিনজন আরোহী ছিল। মৃত ব্যক্তিটি দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২শ হাত দূরে ইরিক্ষেতে গিয়ে পড়ে যায়। স্থানীয় জনতা পুলিশের ব্যবহৃত গাড়িটি পুড়িয়ে ফেলে। পুলিশের ৪ সদস্যের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য কোতয়ালি মডেল থানায় আছে। পুলিশের অফিসার এএসআই জহিরুল ইসলাম সামান্য আহত হন এ কারণে তিনি হাসপাতালে চলে যান। তিনি কুমেক হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
পুলিশের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে স্থানীয় লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যদি দুর্ঘটনা হয় তাহলে পুলিশ সদস্যরা মোটর সাইকেল আরোহীকে উদ্ধার না করে দুই শত গজ দুরে ধান ক্ষেতে ফেলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে কেন? তারা তো যুবকটিকে উদ্ধার করার কথা। আসলে পুলিশ যুবকটিকে ধাওয়া করে মোড়ে এসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি। নিহত যুবক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঘটনার পর পর পুলিশের অন্যান্য সদস্য ঘটনাস্থলে পৌছিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছি এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশ সদস্যদের টহলকৃত গাড়ির চাপায় যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে তাকে আমরা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করেছি। এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন পুলিশ সদস্য এই ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠিন বিচার করা হবে।