ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলায় দেড় শতাধিক নিহত

SHARE

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ও এর আশপাশের কয়েকটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব হামলায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। স্থানীয় সময় শুক্রবারadsfasf রাতে এ হামলাগুলো হয়। এ হামলার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওঁলাদ। দেশটির সকল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করার জন্য বলেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং বাড়তি নিরাপত্তার জন্য নগরজুড়ে সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্যারিস সিটি হলের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শহরের মাঝামাঝি বাটাক্লঁ কনসার্ট হলেই অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন ব্যান্ড দল ইগলস অব ডেথ মেটালের কনসার্ট দেখতে ওই হলে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত ৩ হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।

ইউরোপ ওয়ান রেডিওর সাংবাদিক জুলিয়ঁ পিয়ার্সকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তারা অন্ধের মতো গুলি চালাচ্ছিল। যে যেদিকে পারে দৌঁড়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি বহু মানুষকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।’ জুলিয়ঁ পিয়ার্স বলেন, হামলাকারীরা সবাই ছিল বয়সে তরুণ। কারো মুখে মুখোশ ছিল না। অন্তত তিনবার তারা রাইফেলের ম্যাগাজিন বদলেছে। তারা পরিষ্কার জানত- তারা কী করছে।
এই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের পর হামলাকারীরা সেখানে শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জিম্মি সঙ্কটের রক্তাক্ত অবসান ঘটায়। ওই অভিযানে অন্তত তিন হামলাকারী নিহত হয় বলে বিবিসির খবর।  অন্য হামলাগুলো হয়েছে স্তাদে দে ফ্রান্স এবং কয়েকটি বার ও রেস্তোরাঁ মিলিয়ে ৫টি স্থানে। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের ঘটনাটি আত্মঘাতী বোমা হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই স্টেডিয়ামে তখন জার্মানি বনাম ফ্রান্স ফুটবল ম্যাচ চলছিল, খেলা দেখতে গিয়েছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি এশীয় রেস্তোরাঁর সামনে আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালায় একজন বন্দুকধারী। সেখানে অন্তত দশজনকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওলাঁদ এ ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন ‘নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে। প্যারিসের বাসিন্দাদের যার যার বাড়িতে অবস্থান করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; শহরে নামানো হয়েছে দেড় হাজার সেনা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।
ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত আছে জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নিরপরাধ বেসামরিক জনগণকে সন্ত্রস্ত করার আরেকটি ভয়ঙ্কর চেষ্টা আমরা দেখলাম।’
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, প্যারিসের যে খবার আর ছবি তিনি পেয়েছেন, তাতে তিনি বিস্মিত, হতবাক।
বলা হচ্ছে, ২০০৪ সালে মাদ্রিদে ট্রেনে বোমা হামলার পর ইউরোপে এটাই সন্ত্রাসী হামলার সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্যারিসে বিদ্রুপ ম্যাগাজিন শার্লি এবদুতে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যার দশ মাসের মাথায় আবারও হামলার ঘটনা ঘটল।
দেশের এই পরিস্থিতিতে জি টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্কে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ। রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করে তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। হামলাকারীদের কাউকে ‘দয়া দেখানো হবে না’ জানিয়ে ওলাঁদ বলেন, ‘আবারও আমাদের ওপর ভয়াবহ হামলা হল আমরা জানি, এরা কোথা থেকে এসেছে; আমরা জানি, কারা এই অপরাধী, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।’