(ভিডিও) ওসমান হাদির হত্যার বিচার দাবিতে দুই শিশু সন্তান নিয়ে শাহবাগে মা

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.ম, রাজনীতি প্রতিনিধি,শনিবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১২ ১৪৩২ :

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহিদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে শাহবাগে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা।

অবরোধ কর্মসূচির এক পর্যায়ে দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শাহবাগে উপস্থিত হন এক মা। শীতের রাতেও সন্তানদের কোলে নিয়ে তিনি শহিদ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দাবি করেন। এ দৃশ্য উপস্থিত অনেকের মধ্যে আবেগের সৃষ্টি করে। এসময় হাদি হত্যার বিচার চাইলো দুই শিশু।

Advertisement

এর আগে জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মী সমর্থকরা। সন্ধ্যার পর থেকে সেখানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। আন্দোলনকারীরা রাতভর অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

শুক্রবার রাত ১১টার পর সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ের চারদিকেই বিক্ষোভকারীদের অবস্থান। এতে শাহবাগ দিয়ে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে আশপাশের কয়েকটি সড়কে সীমিত আকারে যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। তিনি বলেন, বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগ মোড় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ্য হাদি লড়াই করে’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’।

ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, তারা সারারাত অবস্থান করবেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, যে ভাইয়ের কণ্ঠে আমরা রাজপথে স্লোগান শুনতাম, আজ তাকে কবরে রেখে এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এটা পুরো ইনকিলাব টিমের জন্য অপূরণীয় শোক।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশে অসংখ্য নেতা তৈরি হয়েছে, কিন্তু ওসমান হাদি নিজেকে কখনও নেতা বলেননি। সবসময় ‘কর্মী’ পরিচয়ে থেকেছেন। নেতৃত্ব দাবি করা সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাই ওসমান হাদি নিজেকে কখনও নেতা বলেননি। তিনি বলতেন- আমি ইনকিলাবের একজন কর্মী। এই চরিত্রই তাকে মানুষের নেতা বানিয়েছে। মৃত্যুর পরও তিনি আমাদের শক্তি, আমাদের স্লোগান, আমাদের লড়াই।

বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির শূন্যতা নিয়ে তিনি প্রশাসন এবং সরকারের দিকে সরাসরি তির ছোড়েন। তিনি জানান, হাদির মৃত্যুর পর খুনিদের অবস্থান, পলায়ন বা দেশে থাকা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে স্পষ্ট কোনও চিত্র নেই। গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বও আমাদের পালন করতে হচ্ছে। এমন একটা সরকারকে বাংলাদেশের মানুষের টাকায় বসিয়ে রেখে লাভ কী?

অবরোধ কর্মসূচিতে শহিদ ওসমান হাদির ভাই শরিফ ওমর বিন হাদি বলেন, সরকারের আচরণে বিচার নিয়ে আন্তরিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ওসমান হাদির বিচারের প্রশ্নটি এখন সারা দেশের মানুষের দাবি। বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত দেন।

Advertisement

এর আগে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বলে জানান সংগঠনের নেতারা।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় পানির ট্যাংকির সামনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা ‘শহিদী শপথ’ নেন। ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে হত্যার বিচার সম্পন্ন ও ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করেন তারা।