(ভিডিও) গাজা ‍যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে বিশ্বনেতাদের স্বাক্ষর

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (ভিডিও),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, মঙ্গলবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ||  আশ্বিন ২৯ ১৪৩২ :

বহু ফিলিস্তিনির প্রাণের বিনিময়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অবশেষে যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, সেই নথিতে স্বাক্ষর করলেন বিশ্বনেতারা। এর মাধ্যমে ঐতিহাসিক গাজা চুক্তি কার্যকর হলো, যা গাজায় দীর্ঘ দুই বছরের ইসলায়েলি বিভীষিকার সাময়িক সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হলো।

Advertisement

মিশরের শারম আল শেখ শহরে ‘গাজা পিস সামিট’ বা গাজা শান্তি সম্মেলন অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য দেওয়ার পরই সবার আগে যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে সই দেন তিনি।

 

মিশরে সোমবার (১৩ অক্টোবর) গাজা সামিটে বিশ্বনেতাদের পাশাপাশি শান্তি প্রচেষ্টার অন্যান্য অংশীজনরাও যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনে আরব নেতাদের পাশাপাশি ইউরোপের পরাশক্তি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ যোগ দিয়েছেন।

 

গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার লক্ষ্যে মিশরের বিখ্যাত পর্যটন শহর শারম আল শেখে ‘গাজা সামিট’ আয়োজন করা হয়েছে।

সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দেন ট্রাম্প। সেখানে নেতানিয়াহুর প্রশংসা করে ইসরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সমাধানে তার পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার কথা শোনান।

 

ওই ভাষণের পরপরই গাজা সামিটে অংশ নিতে মিশরের উদ্দেশে রওনা হন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতো এই সামিটে অংশ নিয়েছেন ‍যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। ট্রাম্পের পর চুক্তিপত্রে তারাও সই করেন।

যুদ্ধবিরতির চুক্তিপত্রে সই করার আগে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, “আমরা কি নথিগুলো পেতে পারি?” তখন একটি সবুজ ফোল্ডার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সামনে রাখা হয়। তিনি তাতে স্বাক্ষর করেন এবং বলেন, “এই মুহূর্তে পৌঁছাতে তিন হাজার বছর লেগেছে, বিশ্বাস করতে পারেন? আর এটা টিকেও থাকবে।”

 

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর চুক্তিপত্রটি মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি, কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মধ্যে আদান–প্রদান হয়; তারা প্রত্যেকে তাতে নিজের স্বাক্ষর করেন।

ইসরায়েল ও হামাস ১০ অক্টোবর ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করে। সে অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে জিম্মি ও বন্দি বিনিময় শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে জিম্মি ২০ জনকে জীবিত এবং কয়েকজন জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলকে বুঝিয়ে দেয় হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার ও বন্দিশালা থেকে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের বহনকারী গাড়িগুলো একের পর এক ফিলিস্তিনের রামাল্লা, গাজাসহ বিভিন্ন শহরে পৌঁছাচ্ছে।

 

যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তাকারী আঞ্চলিক নেতাদের ট্রাম্পের ধন্যবাদ
বিশেষভাবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের নাম ধরে ট্রাম্প বলেন, “আমি যখনই তাকে প্রয়োজন মনে করি, তিনি তখনই পাশে থাকেন।”

এরদোয়ান সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “তিনি যতটা কঠোর হতে পারেন, ততটাই কঠোর— কিন্তু আমরা তাকে ভালোবাসি।” দুজনের মধ্যে ‘ভালো সম্পর্কের’ বজায় থাকার বিষয়টি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

 

ট্রাম্প আরো ধন্যবাদ জানান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ অন্যান্য নেতাদের।

মিশর ও কাতারকে ধন্যবাদ জানালেন ট্রাম্প

যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদনে সহায়তার জন্য মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশর ও কাতারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্প।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির উদ্যোগে ট্রাম্পকে তার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্র সম্মাননা ‘অনার অব দ্য নাইল’ প্রদান করা হয়েছে। এ জন্য সিসির প্রতি ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়া তিনি বিশেষভাবে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তার হৃদয় অসাধারণ বড়।”

গাজা শান্তি সম্মেলনে ২৮ দেশ ও তিন আন্তর্জাতিক সংগঠন

মিশরে গাজা ‘শান্তি সম্মেলনে ২০২৫’-এ ২৮টি দেশ ও তিনটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে এই শান্তি সম্মেলন আয়োজন করা হলেও এতে ইসরায়েল বা হামাসের কোনো প্রতিনিধি অংশ নেননি।

আলজাজিরা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে গাজা সামিটে অংশ নিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, ফিলিস্তিনি, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ১০টি দেশ অংশ নিয়েছে।

সাইপ্রাস, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইতালি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও যুক্তরাজ্য- এই ১০টি দেশ অংশ নিয়েছে ইউরোপ থেকে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা গাজা সামিটে হাজির হয়েছেন।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা ইউরোপীয় কাউন্সিল, আরব লীগ ও জাতিসংঘ তাদের প্রতিনিধি প্রেরণ করে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে।

Advertisement

হামাসের কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই সম্মেলনে আছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।

মিশরে সোমবার গাজা শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতারা।