বাবাকে হত্যার তিন দিন আগেই লাশ গুমে গর্ত খোঁড়েন ছেলে

SHARE

জামিউল হক খান জিসান

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার   ২৮ আগস্ট ২০২৫ ||  ভাদ্র ১৩ ১৪৩২ :

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না কলেজ শিক্ষার্থী জামিউল হক খান জিসান। অনেক বোঝানোর পরও বাবা-মাকে নিয়ে আসতে পারেননি এক ছাদের তলে। এতে অবনতি হয় বাবা ছেলের সম্পর্কের। বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন জিসান। লাশ গুম করতে তিন দিন আগে বাড়ির পাশে খুঁড়ে রাখেন গর্ত।

অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারলেও গর্তে পুঁতে রাখতে পারেননি জিসান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিহত রাশিদুল হক খান সুমনের (৪৭) বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে থানায় মামলা করেছেন তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক খান (৮২)।

সুমন ছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ী। তার ফার্মেসি ধলাপাড়া বাজারে। কলেজপড়ুয়া ছেলে জিসান (২৩) ও এগারো বছর বয়সী এক মেয়ে থাকা অবস্থায় বছরখানেক আগে স্ত্রী জুলিয়া খানমের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় সুমনের।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না জিসান। মা-বাবাকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার অনেক চেষ্টা করেন তিনি। ব্যর্থ হন বাবার কারণে। গত ২০ আগস্ট মাকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে বাবার সঙ্গে তর্কে জড়ান জিসান। একপর্যায়ে বাবার মারধরের শিকার হন তিনি। মাকে ফিরিয়ে আনার কথা বললে বাবা ক্ষিপ্ত হতে পারেন ভেবে নিজেদের ফার্মেসি থেকে আগেই ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট ঘরে এনে রেখেছিলেন জিসান। ঘরের পাশে যেখান দিয়ে মানুষের চলাচল নেই, সেখানে তিন দিন আগেই বাবার লাশ গুমের উদ্দেশ্যে গর্ত খুঁড়ে রেখেছিলেন তিনি।

এদিকে মারধরের শিকার হয়েও ওই রাতে বাবার সঙ্গে একই ঘরে ঘুমান জিসান। এক গ্লাস পানির মধ্যে ২০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখেন তিনি। রাত পৌনে ১২টার দিকে জিসানের বাবা তার কাছে গ্যাস নিরাময়ের ওষুধ চান। গ্যাসের ট্যাবলেটের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মেশানো পানি দেন জিসান। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়েন সুমন। এই ঘুমেই চলে যান চিরঘুমে। পরদিন দুপুরেও ঘুম থেকে না জাগার কারণে প্রতিবেশীরা গিয়ে দেখতে পান সুমন মারা গেছেন। স্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে দাফন করা হয়।

Advertisement

 

অন্যদিকে জিসানের আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করেন দাদা নুরুল হক খান। ২৭ আগস্ট বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদে বাবাকে হত্যার কথা দাদার কাছে খুলে বলেন জিসান। বিষয়টি স্থানীয়দের জানান নুরুল হক। স্থানীয়রা জিসানকে আটক করে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে থানায় নিয়ে যায় তাকে।

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবাকে ঘুমের ওষুধ খায়িয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন জিসান। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলে হাজাতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান।

জামিউল হক খান জিসান