সাংবাদিক তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া স্বাধীন
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুর প্রতিনিধি, সোমবার ১১ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ২৭ ১৪৩২ :
গাজীপুরের সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার স্বাধীনের (২৮) আসল নাম সেলিম। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তিনি নিজের বাবার নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন নুর মোহাম্মদ। তার আসল নাম জামাল উদ্দিন। নাম পরিবর্তন করেননি মায়ের।
সেলিম ওরফে স্বাধীনের বাড়ি পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের সোনাহারা গ্রামে। এই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজিবুর রহমান সরকার মজনু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জামাল উদ্দিনের দুই ছেল। তাদের মধ্যে বড় সেলিম ওরফে স্বাধীন। ছোট ছেলে সোহেল পড়ালেখা শেষে ঢাকায় চাকরি করেন। ছোটবেলা থেকেই এলাকায় বখাটে ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন স্বাধীন। চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তবে, থানায় কোনো মামলা নেই। স্বাধীন চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন।
Advertisement
স্বাধীনের বাবা জামাল উদ্দিন ভ্যানরিকশা চালাতেন। ১৫ বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় সন্তানদের ছেড়ে চলে যান তিনি। পরে দুই ছেলেকে নিয়ে নানা আব্দুস সামাদ প্রামানিকের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন স্বাধীনের মা। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি চলে যান।
তারা জানান, কয়েক বছর পর স্বাধীন গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে যান। সেখানেই জড়িয়ে পড়েন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। মাঝে মধ্যে এলাকায় গিয়ে কয়েকদিন থেকে আবারো ঢাকায় ফিরে যেতেন তিনি।
এলাকাবাসীর ধারণা, ঢাকায় অপরাধ করে নিজেকে আড়াল করতে কিছুদিন এলাকায় এসে থাকতেন স্বাধীন। তিনি ঢাকার কোথায় থাকতেন, কী করতেন তা এলাকাবাসীর জানা নেই।
বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মজিবুর রহমান সরকার মজনু বলেন, “সাংবাদিক তুহিন হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমরা জানতে পারি সে ঢাকার গাজীপুরে থাকতো। তার নামতো স্বাধীন নয়। তার আসল নাম সেলিম। আর বাবার নাম নুর মোহাম্মদ নয়। তার আসল নাম জামাল উদ্দিন।”
সাংবাদিক তুহিন হত্যায় জড়িত পাবনার আরেক যুবক ফয়সাল হাসান (২৩)। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন ওরফে রমজান জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড পাঁচবাড়িয়া গ্রামের কিয়াম উদ্দিনের ছেলে। তার তিন ছেলের মধ্যে ফয়সাল সবার বড়।
পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিন্না সরকার বলেন, “কিয়াম উদ্দিন গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ৩০ বছর আগে তিনি জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান। কিয়াম উদ্দিন গাজীপুরেই বিয়ে করে বসবাস করতে শুরু করেন। তার এলাকায় কোনো বাড়ি নেই। এলাকায় বেড়াতে আসলে ছোট ভাই আবু হানিফের বাড়িতে থাকেন।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্ত ফয়সাল কখনো গ্রামে গেলে মাদকাসক্ত যুবকদের সঙ্গে চলাফেরা করেন। এর বাইরে ফয়সাল সম্পর্কে বেশি কিছু জানাতে পারেনি তারা।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর মহানগরীর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে।
ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
Advertisement
তুহিন হত্যা মামলায় গাজীপুর পুলিশ সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে তাদের গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক মো. আলমগীর আল মামুন প্রত্যেক আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।
সাংবাদিক তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া স্বাধীন