(ভিডিও) গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: প্রত্যক্ষদর্শী সহকর্মীর বর্ণনায় যা উঠে এল

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা  প্রতিনিধি,শুক্রবার   ০৮ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ২৪ ১৪৩২ :

পেশাদারিত্বই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল সাংবাদিক আসাদুজ্জমান তুহিনের জীবনে। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ করায় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এই সাংবাদিককে।

 

সাংবাদিক তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।

ঘটনার কিছু সময় আগে এক সঙ্গে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক তুহিন ও তার সহকর্মী শামীম হোসেন।

Advertisement

ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শামীম হোসেন বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন এক পাশ থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক নারী ও এক পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। ঠিক এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়।’ এসময় তারা রামদা বের করলে ওই লোকটা (যার ওপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়। ঠিক ওই সময় ওরাও ধারাল অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়।”

 

তিনি বলেন, “তখন আমার পাশ থেকে তুহিনও (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) মোবাইল নিয়ে ওদের পিছে পিছে দৌড় দিছে। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। সে কারণে আমি আর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি যারা রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তারা হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছন দিকে তাকাচ্ছে। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে।”

 

সাংবাদিক তুহিনের দুই সন্তান ফাহিম (২) ও তৈকি (৫)।


“ওই সময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোনো গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে,” যোগ করেন শামীম হোসেন।

তুহিনকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল, শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখছিল; কেউ এগিয়ে আসেনি।

 

হত্যাকাণ্ডের আগ মুহূর্তের সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পিছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই ভিডিও করার কারণে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চৌরাস্তা এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে থাকে। ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তারা ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, সেও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, সুজন- তারা সবাই ছিনতাইকারী গ্রুপের সদস্য।

 

সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম মর্গের সামনে বিমর্ষ চিত্তে বসে রয়েছেন। ছোট ভাইকে হারিয়ে কাতর সেলিম বলেন, “আমার নিরপরাধ ভাইকে কেন হত্যা করল? আমরা বিচার চাই। সাংবাদিকদের আমার ভাইয়ের পরিবারকে দেখতে হবে।”

তুহিনের চাচাতো ভাই রুবেল বলেন, “তুহিনের দুটি সন্তান রয়েছে, তৈকি (৫) ও ফাহিম (২)। ওদের ভবিষ্যৎ কী? ওদের ভরণপোষণ কে করাবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে সাংবাদিককের পরিবারের।”

Advertisement

 

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় বৃহস্পতিবার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার সময় বহু মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে সেই দৃশ্য; কেউ এগিয়ে আসেনি।