প্রেম করে বিয়ের পর যৌতুক দাবি, পঞ্চগড়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পঞ্চগড়  প্রতিনিধি, রোববার   ২০ জুলাই ২০২৫ ||  শ্রাবণ ৫ ১৪৩২ :

পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর, মানসিক নির্যাতন ও পরনারীতে আসক্তির অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী। এ ঘটনায় তিনি ঢাকা সিএমএম আদালত ও যশোরে পৃথক মামলা করেছেন।

Advertisement

এ ঘটনার পর তার স্বামী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেখিয়ে তাকে হেনস্থা করবেন বলে শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চৈতী। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসিফ আলী জিভাল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি যেহেতু মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেকারণে আদালতেই এর সুরাহা হবে।

মামলার বাদি দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী যশোর শহরের পুরাতনকসবা বিবি রোডের দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। আর খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন সোনাডাঙ্গা ফেজ-২ এর (রোড নম্বর ৫, হোল্ডিং নম্বর ৫৮) বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে মো. আসিফ আলী জিভালও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পূর্বের জানাশোনা থেকে পরিচয় ও পরে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তারা ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।

জিভাল ও চৈতীর এর আগে বিয়ে হয় এবং তাদের উভয়ই তালাকপ্রাপ্ত হয়ে এই বিয়ে করেন। চৈতীর প্রথমপক্ষে একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। যা দুইজনেই তাদের অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন।

চৈতীর অভিযোগ, বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই জিভাল ওই বছরের ১৯ এপ্রিল একটি গাড়ি কেনার জন্যে তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে না পারায় জিভাল তাকে শারীরিকভাবে আঘাত (চড়-থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে বাড়ি) এবং মানসিকভাবেও অত্যাচার করেন। পরদিন তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সংসার টিকিয়ে রাখতে দুইপক্ষের আপোস-মীমাংসার পর তিনি ফের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান।

এরপর ১৫ নভেম্বর তিনি বাবারবাড়ি বেড়াতে এলে জিভালও আসেন। যশোরে এসেও তিনি গাড়ি কেনার সেই ২৫ লাখ টাকার জন্যে ফের চাপ দিতে থাকেন। পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা জানিয়ে ওই টাকা দিতে পারবে না জানালে জিভাল এখানেও তাকে মারধর করেন।

Advertisement

তিনি অভিযোগ করেন, তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারতে থাকেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে নীলাফোলাসহ ঠোঁট কেটে যায়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। পরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারপিটের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।

চৈতী বলেন, বিয়ের পর থেকেই পল্লবী নামে আরেক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান জিভাল। তাদের সেই সম্পর্কে বাধা হয়েছি বিধায় যৌতুকের দাবিতে আমাকে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত ও যশোর আদালতে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। এসব ঘটনার আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো সুরাহা না করায় গত ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছি। সেখানে যৌতুকের দাবিতে মারপিটসহ পরনারীতে আসক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

Advertisement

https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ2

এদিকে, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসিফ আলী জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসাথে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাকে কেন আমি নির্যাতন করবো বা যৌতুক চাইবো! তিনি এখন আর আমার স্ত্রী নেই। মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন উল্লেখ করা হয়েছে; ওসময় আমি অন্যবিভাগের ট্রেনিংয়ে ছিলাম। আমাকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। যেহেতু মামলা করেছে, আদালতই বিচার করবে।