ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),দৈনিক ইনকিলাব এর সৌজন্যে,রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২২ ১৪৩২ :
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুযোগ নিয়ে এক অস্বাভাবিক ও বিতর্কিত ঘটনা সামনে এসেছে। একই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের কন্যা পরিচয়ে চাকরি পেয়েছেন দুই নারী। পরিচয়, ঠিকানা ও পিতার নাম এক হলেও প্রশ্ন উঠেছে কে আসল, আর কে ভুয়া?
ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়নের বড় নোয়াগাঁও গ্রামে। সেখানে বসবাসকারী শাহিনুর আক্তার ও রত্না আক্তার দুজনই দাবি করছেন, তাঁরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের সন্তান। দুজনের জাতীয় পরিচয়পত্র, স্থায়ী ঠিকানা এবং চাকরির কাগজে একই বাবার নাম ও ঠিকানা রয়েছে। তবে দুই নারীর মাতার নাম ভিন্ন, যা পুরো ঘটনার সত্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তবে বর্তমানে শাহিনুর আক্তার মানিকারচর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছে। নিয়োগপত্র অনুযায়ী তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত। অন্যদিকে রত্না আক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনিও একই কোটার সুবিধাভোগী বলে দাবি করেছেন।
Advertisement
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব ছিলেন বড় নোয়াগাঁও গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। বহু বছর আগে মৃত্যুবরণ করা এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সখিনা বেগম এবং কন্যা রত্না আক্তারকে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরেই চেনেন। তাঁরা এলাকায় সম্মানিত এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত একটি পরিবার হিসেবেই পরিচিত। বিপরীতে শাহিনুর আক্তারের পরিচয় নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। স্থানীয় অনেকেই জানেন না, তার সঙ্গে আব্দুর রবের সম্পর্ক কতটা প্রকৃত।
একজন প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই রত্নাকে আব্দুর রবের মেয়ে হিসেবে জানি। শাহিনুরকে এই পরিচয়ে কেউ চিনে না। কীভাবে সে কোটা পেল, সেটাই প্রশ্ন।”
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেনু দাস প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিনুর আক্তারের দাখিলকৃত কাগজপত্রে পিতার নাম আব্দুর রব থাকলেও তার মায়ের নাম রত্নার মায়ের নামের সঙ্গে মেলে না। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে ইউএনও তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
Advertisement
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কমিটি শিগগিরই মেঘনায় গিয়ে সরেজমিন তদন্ত করবে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শাহিনুর আক্তার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও কিছু মুক্তিযোদ্ধা নেতার সহায়তায় নিজেকে বৈধ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রত্না আক্তার বলেন, “আমি ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেটি পরিবার-পরিজন ও গ্রামবাসী সবাই জানেন। সেই পরিচয়েই চাকরি পেয়েছি। ইউএনও অফিস একবার ডেকেছিল, আমি প্রয়োজনীয় সব কাগজ নিয়ে হাজির হয়েছিলাম।”
অন্যদিকে, শাহিনুর আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, ‘চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।’ এরপর ফোন কেটে দেন। ঠিক কয়েক মিনিট পর তাঁর স্বামী ওবাইদুল্লাহ প্রতিবেদককে ফোন করে তার অবস্থান জানতে চান, “আপনি কোথায় আছেন?” প্রতিবেদক জানান, তিনি উপজেলা সদরে আছেন। ওবাইদুল্লাহ বলেন, “আমি আসছি।” তবে এরপর আর তিনি আসেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সায়মা রহমান বলেন, “ঘটনার বিষয়টি আমি শুনেছি। যিনি জড়িত, তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তদন্ত শেষে কোনো দিকনির্দেশনা দিলে আমরা সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাই এই মুহূর্তে অফিসিয়ালি কিছু বলার অবস্থানে নেই।”
Advertisement
https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN
স্থানীয়দের প্রশ্ন-মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতো স্পর্শকাতর ও সম্মানজনক ব্যবস্থায় যদি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে, তবে তা শুধু একজন প্রকৃত সন্তানকে নয়, পুরো মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রদায়কেই অপমান করে। এব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
এছাড়াও, একই পিতা, ভিন্ন মাতা-এমন পরিচয়ের সংঘাতে এখন উত্তাল মেঘনা। সত্যটা আসলে কী? তদন্তে উঠে আসবে কিনা প্রকৃত উত্তর, সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করেন এলাকাবাসী।