চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গ্রেপ্তার (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত  প্রতিনিধি, মঙ্গলবার   ০৩ জুন ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ২০ ১৪৩২ :

ফরিদপুরে চাঁদাবাজির মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজ বাড়ি নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়নের কোদালিয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

Advertisement

গোলাম হায়দার এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) স্বঘোষিত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ অভিযানকালে তার আরো তিন সহযোগীকেও আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই মামলায় তাদের ফরিদপুরের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম জানান, হায়দারের সঙ্গে ফরহাদ হোসেনসহ আরও তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শণ ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

থানা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকালে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন কোদালিয়া শহীদনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মো. রাজু মোল্লা। এ অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ রাতেই যৌথ অভিযান চালায়।

মামলার বাদী রাজু মোল্লা বলেন, ‘পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রবীণ হওয়ায় বর্তমানে আমি প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনকালে পরিষদে কোনো মালামাল এলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দার বিভিন্ন সময়ে তার ভাগ দাবি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে কাবিখা-কাবিটার ভাগ হিসেবে টাকা দাবি করে আসছিল।

 

তিনি বলেন, গত ২৯ মে মুরাদ নামে এক ব্যক্তি আমাকে গণকবরের পাশে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে হায়দার নিজেই বসা ছিলেন এবং ভাগ না দিলে আমাকে হুমকি-ধমকি দেয়া হয়। গতকাল বিকালে হঠাৎ করে নগরকান্দা বাজারে আমার দোকানে সামনে কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে আসেন এবং এসেই মেজরের নামে হুমকি দিয়ে যান। পরে আমি থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। সাবেক এই মেজরের ভয়ে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তিনি নিজেকে এনসিপির ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন।’

এদিকে, কোদালিয়া গ্রামে যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় রাতে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ফরহাদ হোসেন ‘মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ বলে গুজব ছড়ান। এতে আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে পুলিশ সাইরেন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানায়—এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব, ডাকাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে নগরকান্দা উপজেলার ডাংগি ইউনিয়নের ভবুকদিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নারী নেত্রীর বোনকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনীর দল পৌঁছলে গোলাম হায়দার লোকজন নিয়ে সেনা কমান্ডারের সাথে অশোভন আচরণ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন গোলাম হায়দার।

স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর গোলাম হায়দার SS07 ফোর্স নামে একটি বাহিনী গড়ে তুলেন। গত মে মাসে তিনি নগরকান্দা উপজেলায় সদ্যগঠিত এনসিপি নামক রাজনৈতিক দলের দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন। তিনি এনসিপি থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। নিজস্ব বাহিনীর মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে তিনি নির্বাচনী এলাকায় চলাফেরা করতেন। গত ২৪ মে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের হলরুমে জাতীয় নাগরিক পার্টি আয়োজিত মতবিনিময় ও জনতার সংলাপে এনসিপি প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্যও দেন তিনি।

গোলাম হায়দারের ব্যাপারে এনসিপির জেলার সংগঠক মো. বায়োজিদ হোসেন (সাহেদ) বলেন, ‘উনি এনসিপির কেউ নন। আমাদের দলে যোগদানের জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন, বিভিন্ন প্রোগ্রামেও অংশগ্রহণ করছেন। সে হিসেবে মেজর হায়দার সাহেবও ছিলেন। কে কেমন সেটা তো এখনো আমরা জানি না। তবে বিষয়টি কেন্দ্রকে অবগত করা হবে।’

Advertisement

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা জানান, ‘উনি (মেজর হায়দার) এনসিপি কিংবা বৈষম্যবিরোধীর কেউ নন। উনি আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছেন। ওনাকে গ্রেপ্তার করা মানে ভালো খবর। কারণ, বৈষম্যবিরোধীর উপদেষ্টা পরিচয় দিয়েও তিনি মানুষকে ভয়ভীতি দেখাতেন। আসলেই উনি একজন বাটপার প্রকৃতির লোক।’