ঋণ খেলাপির দায়ে নিলামে উঠছে সাবেক এমপি ফারুকের শপিং কমপ্লেক্স (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রাজশাহী প্রতিনিধি,রোববার   ০১ জুন ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ১৮ ১৪৩২ :

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মো. ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ‘থিম ওমর প্লাজা’ শপিং কমপ্লেক্স ঋণ খেলাপির দায়ে নিলামে উঠতে যাচ্ছে। রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র নিউ মার্কেটের পাশে অবস্থিত এই আধুনিক ও বৃহৎ মার্কেটটি নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে নানা জটিলতা, প্রতারণা ও জবরদখলের অভিযোগ।

Advertisement

২০১১ সালে থিম রিয়েল এস্টেট লিমিটেড-এর সঙ্গে ফারুক চৌধুরীর একটি চুক্তি হয় মার্কেটটি নির্মাণের জন্য। চুক্তি অনুসারে, নিউ মার্কেটের উত্তর পাশে তার মালিকানাধীন ৩০ কাঠা জমিতে ১০ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে ৭ তলা হবে বাণিজ্যিক এবং বাকি ৩ তলা আবাসিক। তবে জমিটি তিনি আগে থেকেই আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন, যা তিনি গোপন করে চুক্তিতে অংশ নেন।

প্রকল্পে ফারুক চৌধুরীর শেয়ার ৩৫ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ার কেএম মোস্তাফিজুর রহমানের ২৫ শতাংশ এবং বাকি ৪০ শতাংশ দুইজন অংশীদারের মধ্যে বিভক্ত ছিল। ২০১২ সালে কাজ শুরুর পর ফারুকের প্রতারণা প্রকাশ্যে আসে, কিন্তু ততদিনে কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে প্রজেক্ট চালু রাখতে কোম্পানি ২০১৫ সালে ধানমণ্ডি শাখার প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ২৬ কোটি টাকার ঋণ নেয় এবং ২০১৮ সালে প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়।

কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের দিকে ফারুক চৌধুরী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মার্কেটটি জোরপূর্বক দখলে নেন। তিনি নিজের লোকজন দিয়ে মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং অন্য অংশীদারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এর বিরুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে মামলা করেন। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফারুক মামলার ওপর স্টে অর্ডার নেন, যা সম্প্রতি আদালত বাতিল করে দিয়েছেন।

মোস্তাফিজ জানান, ২০১৭-১৮ সালের মধ্যেই তিনি ব্যাংকের ঋণের ১৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বাকি অর্থ ফারুক পরিশোধ না করায় বর্তমানে প্রকল্পে ২১ কোটি ৫১ লাখ টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। ফলে প্রিমিয়ার ব্যাংক ভবনটি নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এদিকে, পলাতক অবস্থায় থেকেও সাবেক এই সংসদ সদস্য আরজেএসসি-কে প্রভাবিত করে ‘থিম ওমর প্লাজা’র মালিকানা কাগজপত্র অবৈধভাবে পরিবর্তন করেছেন। প্রকৃত অংশীদারদের অজ্ঞাতে তিনি স্ত্রী নিগার সুলতানা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান, মেয়ে ও ছেলেসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নতুন ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন, যা কোম্পানি আইনের পরিপন্থী।

Advertisement

আইন অনুযায়ী, কোনো লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার পরিবর্তন বা নীতিমালা সংশোধনের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সম্মতি আবশ্যক। কিন্তু এককভাবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি সম্পূর্ণ অবৈধ উপায়ে মালিকানা বদল করেন।

মামলা পুনরায় চালু হওয়ার পর এবং ঋণ খেলাপির পরিপ্রেক্ষিতে ‘থিম ওমর প্লাজা’র ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। নিলামের মাধ্যমে ভবনটির ভাগ্য নির্ধারণ হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।

ছবি: সংগৃহীত