শেকলে বাঁধা ইয়াসিরের জীবন (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম(টিভি),জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট প্রতিনিধি,বুধবার   ২৮ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ১৪ ১৪৩২ :

হাত-পা আর গলায় শেকল বেঁধে রাজধানীর পথ হাঁটছে এক কিশোর। নাম বলত পারলেও ভুলে যায় নিজের ঠিকানা। তাই হাতে খোদাই করে লেখা ভাইয়ের ফোন নাম্বার।

Advertisement

সিনেমা নয় বাস্তবেই ১৪ বছরের এই কিশোরের খাওয়া, ঘুম সবই চলে শেকলে বাঁধা অবস্থায়। এ জীবন থেকে মুক্তি চান ইয়াসির। কবিরাজ আর ঝাড়ফুঁকে কাজ হয়নি। বাবা-মায়ের সামর্থ্য নেই চিকিৎসার। একাত্তর টিভি কথা বলে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউটে। চিকিৎসা করতে আগ্রহ জানান পরিচালক।

মোহাম্মদপুরের রায়রে বাজার বদ্ধভূমিতে ভর দুপুরে হঠাৎ চোখ আটকে যায় টিম একাত্তরের। গলা, হাত-পায়ে শেকল বেঁধে আপন মনে ঘুরছে এক কিশোর। কিছুটা সময় প্রতিবেদক তাকে অনুসরণ করেন। একসময় কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে কিশোরটি জানান, তার নাম ইয়াসির, ঠিকানা রায়েরবাজার। এর বেশি জানে না।

child

এরপরেই দেখা হয় ইয়াসিরের মা রিনা বেগমের সাথে।

প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে, ফুচকা আর জুস খাওয়ার আবদার করে ইয়াসির। এরপর কথা বলতে রাজি হয় সে। ফুচকা আর জুস খাওয়ার পর গল্পের ডালি খুলে বসে ইয়াসির। জানায় স্কুলে যেতে চায় সে, খেলতে চায় ফুটবল। কিন্তু সে বন্দী, হঠাৎ হঠাৎ বাসে উঠে চলে যায় অজানা গন্তব্যে। এভাবেই কক্সবাজার, খুলনা, রংপুর, চিটাগাং, রাজশাহী, সদরঘাটসহ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। ঠিকানা মনে থাকে না, তাই ফিরে আসতেও পারে না।

মা রিনা বেগম জানান, ২০১১ সালে জন্ম ইয়াসিরের। ৬ বছর পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়ছে। এরপর মাদ্রাসার কড়া শাসন আর হুজুরের মারের ভয়ে পালিয়েছে মাদ্রাসা থেকে। এরপর ধীরে ধীরে ইয়াসিরের ভুলে যাওয়া রোগ শুরু হয়।

ইয়াসিরের ঠিকানা নিয়ে প্রতিবেদক সেদিন ফিরে আসেন। দু’দিন পর সকালবেলা হাজির হন আড়াইল্লাবাজারের ৮ ফিট বাই ১০ ফিটের ইয়াসিরদের ঘরে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই শেকলে বাঁধা তার জীবন।

বড়বোন সুখী বেগম। যদিও সুখী হতে পারেননি বা সংসারই করেননি ভাইকে দেখাশোনার জন্য। আর বড় ভাই শুকুর আলীকে নিজের কাজকর্ম ছেড়ে প্রায়ই চলে যেতে হয় ইয়াসিরকে খুঁজতে। এরমাঝে সাভারে গিয়ে বড় দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছিলো ইয়াসির।

child3

গজনী সিনেমার আমির খানের মতো একসময় ভাইয়ের হাতে ট্যাটু করে মোবাইল নাম্বার লিখে দেয় বড় ভাই। তাই এখন চলে গেলেও একসময় ফিরে আসতে পারে। কেউ না কেউ ফোন দিয়ে বাসায় খবর দেয়।

আগে না করালেও এখন পরিবারের সদস্যরা ইয়াসিরের চিকিৎসা করাতে চান। আর্থিক সক্ষমতা নেই সে কথাও জানালেন তারা। যদি কেউ সহযোগিতা করে, তবেই সম্ভব।

ইয়াসিরেরও -এই জীবন ভালো লাগে না। রাস্তায় বের হলে আইসক্রিম খেতে, মুক্ত মাঠে খেলতে মন চায় তার। কিন্তু কেউ খেলায় নিতে চায় না। তাই মাঝে মাঝে চলে যায় বিভিন্ন জেলায়।

child2

প্রতিবেশীরা জানায়, কোনো ধরনের হিংস্রতা বা রাস্তাঘাটে সে কাউকে বিরক্ত করে না ইয়াসির। পরিবারের সম্মতি নিয়ে একাত্তর ইয়াসিরের ছবি আর ভিডিও দেখায় মানসিক চিকিৎসকদের। তারা বলছেন, সমস্যাটি নিরাময় যোগ্য। বিনামূল্য তার চিকিৎসায় আগ্রহী জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান।

Advertisement

চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী ইয়াসিরকে হাসপাতালে আনার জন্য একাত্তর টিম যখন আবার যায় রায়ের বাজারে পথে। তখন মা রিনা জানান, ইয়াসির আবারো ঘর ছেড়েছে। এবার ফিরলেই নিয়ে যাবেন চিকিৎসকের কাছে। ইয়াসিরের চিকিৎসায় সকলের সহায়তাও চান তিনি। তার চিন্তা, তাদের মৃত্যুর পর কে দেখবে ইয়াসিরকে?