কল্যাণপুরে আর ব্যাচেলরদের বাসাভাড়া দেবেন না মালিকরা

SHARE

kollan purঢাকা: রাজধানীর কল্যাণপুরে আর ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দেবেন না বাড়ি মালিকরা। গতকাল মঙ্গলবার এই এলাকার একটি বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ৯ ‘জঙ্গি’ নিহত হওয়ার প্রেক্ষপটে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে এমন সিদ্ধান্তকে একতরফা বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার ব্যাচেলর বাসিন্দারা।

কল্যাণপুরের সমাজ কল্যাণ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রতন বুধবার বাংলামেইলকে বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ‘তাজ মঞ্জিল’ বাসায় পুলিশের গুলিতে ৯ জঙ্গি নিহতের পর রাতেই আমরা মালিকরা আলোচনায় বসি। তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কল্যাণপুরে কোনো ব্যাচেলরকে বাড়ি ভাড়া দেয়া যাবে না। যারা আছে তাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে। এছাড়া ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম ঠিকভাবে পূরণ করে মালিক সমিতি বা থানায় দেয়া হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। মনিটরিং টিমের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি তদারকি করা হবে।

তিনি জাহাজবাড়ি খ্যাত ‘তাজ মঞ্জিল’ এর মালিক ‘কাকাদুাদু’র নাম উল্লেখ করে বলেন, উনি বেশি পণ্ডিত! আশির দশকে এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরপর থেকে এমন কোনো মাস নেই যখন এই বাড়িতে ভাড়াটিয়া ও মালিকের কোনো সমস্যা হয়নি। সারাবছরই এই সমস্যা লেগে থাকে। এরজন্য ভাড়াটিয়াদের পাশাপাশি উনিও দায়ী।

ব্যাচেলর ভাড়া না দেয়া বিষয়ে জানতে চাইলে কল্যাণপুরের ৫নং সড়কের ৫২/২ বাসার মালিক সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার আলী মেহেদী খান নিজের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর যা সিদ্ধান্ত আমারও তাই। আমি আলাদা করে কিছু বলতে চাই না।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা শামীম আল হাসান বলেন, আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে চাই না। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে বাঁচতে চাই। এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখতে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া দেয়া যাবে না।

ব্যাচেলরদের কারণে প্রতিবেশি পরিবারের সদস্যরা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে না উল্লেখ করে শামীম বলেন, বাসায় বেলকুনি থাকলেও সেখানে আমি বা পরিবারের কেউ যাই না। কারণ একটাই- পাশের বাসার ব্যাচেলর। বের হয়েই দেখবেন কেউ হা করে তাকিয়ে আছে অন্য বাসায় বা দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। এ ধরনের পরিবেশ সত্যিই বিব্রতকর।

এদিকে বাড়িভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্তের বিক্ষুদ্ধ প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছেন কল্যাণপুরের ব্যাচেলর বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা সংখ্যায় হাতেগোণা কয়েকজন। তাদের জন্য কেন ব্যাচেলরদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে?

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাকির আহমেদ বলেন, আমরা পড়াশুনা করতে ঢাকা আসছি। এখানে থাকার জন্য ইউনিভার্সিটির কোনো হল নেই। এদিকে ব্যাচেলরদের যদি মালিকরা বাসা ভাড়া না দেয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো। আমাদেরতো আর বাড়িঘর নেই।

বাড়ি ভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করেন আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, এক দু’জন অপরাধীর জন্য সবাইকে বাসা ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এধরনে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত মালিকরা নিতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, কল্যাণপুরের মতো সবাই যদি বাসা ভাড়া দেয়া বন্ধ করে তাহলে ব্যাচেলররা যাবে কোথায়?

নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরিজীবী ফয়সাল আদনান। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে তা থানায় জমা দিবেন। কিন্তু সেই কাজটি তারা করেন না বা করতে পারেন না। এই কাজে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বাংলামেইলকে বলেন, শুধু ব্যাচেলর নয় সকল ভাড়াটিয়াকে অবশ্যই সঠিকভাবে ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করতে হবে। সেই ফরম থেকে ভাড়াটিয়ার পিসিআর (অতীতের ক্রাইম রেকর্ড) যাচাই বাচাই করে কোনো কারণে সন্দেহজনক মনে হলে বা অতীতে কোনো অপরাধমূলক কাজে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত নয় তাদেরকে বাড়ি ভাড়া দিতে কোনো বাধা নেই।