ইরান-ইসরাইলের নীরবতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আভাস! (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ,রোববার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ৮ বৈশাখ ১৪৩১ : ঐতিহাসিক পারস্যই হলো এখনকার ইরান। ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস, সভ্যতা, শিক্ষা-দীক্ষা আর জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ এই দেশটি একটা সময় পরম বন্ধু থাকলেও, কালের পরিক্রমায় এখন ইসরাইলের চরম শক্র। কারণ ইরান আরব দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্র, যারা স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশ্নে আপোসহীন। ইরান এখনও স্বপ্ন দেখে পূর্ব জেরুজালেম হবে ফিলিস্তিনের রাজধানী আর আল-আকসা হবে অন্যতম মুসলিম তীর্থ।

Advertisement

মোটা দাগে এ কারণেই ইরানকে চিরশক্রু মনে করে ইসরাইল। কালে কালে এই শত্রুতা রূপ নিয়েছে দারুণ উত্তেজনাকর এক অধ্যায়ে। ইরান-ইসরাইলেন বৈরিতা এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সংকট। একে অপরকে ঘায়েল করতে সব সময়ই তৎপর। এতোদিন ইরান শুধুমাত্র নিজেদের রক্ষা করেই গেছে, অবলম্বন করেছে কৌশলগত ধৈর্যের নীতি। অন্যদিকে ইরানের স্বার্থে একের পর এক আঘাত করে আসছে ইসরাইল।

যার সবশেষটি ছিলো দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা করে দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা। এতে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় তেহরানের। সব সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া তেল আবিবকে শিক্ষা দিতে ইসরাইলের মাটিতে নজিরবিহীন ও দুঃসাহসিক হামলা চালায় ইরান। যা ছিলো ইসরাইলের মাটিতে ইরানের প্রথম সরাসরি কোন হামলা। এর পাল্টা জবাব দিয়েছে তেল আবিব, তবে সেই হামলায় এখন হাসির খোরাক ইসরাইল।

তবে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির অভিজ্ঞ সাংবাদিক লেসলি ডুসেটে মনে করেন, সরাসরি পাল্টাপাল্টির পর এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সবশেষ রাউন্ড আপাতত শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরাইল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি যে, শুক্রবার ভোরে ইরানে হামলাটি তাদের কাজ ছিল। আর ইরানের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন।

iran

গেলো শুক্রবার কি ধরনের অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছিল এবং কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তার হিসাব এখনও পরস্পরবিরোধী এবং অসম্পূর্ণ। আমেরিকান কর্মকর্তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা বলছেন, কিন্তু ইরানি কর্তারা বলছেন, ইসফাহান এবং তাবরিজে হামলাগুলো ছোট ড্রোন বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে। এতে হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেভাবেই হামলা হোক, সেটিকে পশ্চিমারা বলছেন, ইসরাইলের সতর্কবার্তা।

Advertisement

আসলেই কি তাই? ইসরাইলের তথাকথিত হামলায় ব্যবহার করা ড্রোন বা মিসাইলগুলোর শেষ গন্তব্য ছিলো ইরানের কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইসফাহান। ইসলামিক ঐতিহ্য ছাড়াও এই প্রদেশটিতে রয়েছে নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র, পারমাণবিক প্রযুক্তি কেন্দ্র এবং একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি। ইসরাইলের দাবি এই বিমান ঘাঁটি ব্যবহার করেই গেলো ১৪ এপ্রিল তিনশ’র বেশি ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছিলো ইরান।

বিবিসি মনে করে, তেল আবিব আপাত হাস্যকর হামলার মাধ্যমে তেহরানকে এই বার্তা দিতে চেয়েছে যে, ইরানের স্পন্দিত হৃদয়ে আঘাত করার মতো বুদ্ধিমত্তা এবং সম্পদ তাদের রয়েছে। ইহুদিদের নিস্তার পর্ব শেষ হবার আগেই পাঠানো এই বার্তা পাঠানোকে ইসরাইল সর্বোত্তম মনে করলেও এর সফলতা নিয়ে নিশ্চিত নয়। তবে আমেরিকা মনে করে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়াও কম নয়।

নিঃসন্দেহ বসে নেই ইরানও। ইসরাইলি হামলা নিয়ে নীরবতা পালন করলেও, দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ৮৫তম জন্মদিনের আগে গোটা বিষয়টি একবার ঝালাই করে নিতে চাইতেই পারে তেহরান। আগামীকে ইসরাইলের যে কোন হামলা কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, তার একটি নকশা আঁকতে শুরু করেছে ইরান। কারণ তারা ভালো করেই জানে, এটিই নিশ্চিতভাবে ইসরাইলের শেষ হামলা নয়।

কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি তার শুক্রবারের বক্তৃতায় হামলার বিষয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। তবে দামেস্কে হামলার প্রতিশোধ নিতে তার দৃঢ়তাতে হালকাভাবে দেখেনি ইসরাইল ও তার মিত্ররা। ইরান তাদের অপারেশনের নাম রেখেছিলো ট্রু প্রমিজ- অর্থাৎ সত্যিকার প্রতিশ্রুতি। ইসরাইলের মাটিতে হামলার বিষয়টিকে ইরানের একটি নিজস্ব আবশ্যিক ইচ্ছা হিসাবে উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছিলেন রাইসি।

ইরান তার ‘কৌশলগত ধৈর্য’ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিজেকে গর্বিত করেছে, যে কোন উসকানিতে দ্রুত এবং সরাসরি প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের নীতি অবলম্বন করেছে ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে। কিন্তু ইসরাইলে সরাসরি হামলার মাধ্যমে অবশেষে ছায়া থেকে বের হয়ে আসলো ইরান। নিজেদের সামরিক সক্ষমতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই যে এমন অবস্থান নেয়া, সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে পশ্চিমারা।

গত ছয় মাসের ভয়াবহ গাজা যুদ্ধের সময় ইসরাইল তার লক্ষ্যবস্তু বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের অস্ত্রের ভাণ্ডার, ভবন, ঘাঁটি এবং সরবরাহ রুটসহ তেহরানের সম্পদে আঘাতই নয়, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরও হত্যা করছে তেল আবিব। এরপরই আসে দামেস্কে হামলা। যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় চলা ছায়া যুদ্ধকে প্রকাশ্য সংঘর্ষে বিস্ফোরিত করেছিলো।

‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়’ এটা এখন বুঝতে পারছে উভয়পক্ষ। ফলে আপাতত ধরে নেয়া যায়, এই দেশে আর কেউ কারো মাটিতে সরাসরি আঘাত করবে না। এই মুহূর্তের জন্য মধ্য ও দূরপ্রাচ্য স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলছে। তাদের মনে হচ্ছে, ইসরাইলের পাল্টা হামলা আপাতত উত্তেজনা কমিয়ে দিয়েছে। সবাই একটি সর্বনাশা সর্বাত্মক যুদ্ধ বন্ধ করতে চায়। তবে কারো সন্দেহ নেই, কোনও নিঃশব্দ স্থায়ী হতে পারে না।

Advertisement

কারণ মধ্যপ্রাচ্য এখনও উত্তপ্ত। গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ থেমে নেই। হামাস নিধনে রাফাহ হামলার সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে ইসরাইল। ফলে বসে থাকবে না ইরানও। এই অঞ্চলজুড়ে দেশটির গড়ে তোলা প্রতিরোধের অক্ষ যথীরিতি সক্রিয় থাকবে। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাক ও সিরিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী এবং ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী নিয়মিত ইসরাইলে চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীতে যাবে।