ঘরে ঢুকে গৃহবধূর শ্লীলতাহানি, ‘শাসন’ করে ছেড়ে দিলো পুলিশ

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),জয়পুরহাট প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ : জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক বখাটের বিরুদ্ধে রাতে প্রতিবেশী গৃহবধূর ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

এ ঘটনায় রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে পুলিশ অভিযুক্ত বখাটে থানায় ডেকে এনে শাসনের পর ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

এ  ঘটনা ঘিরে থানার এক সহকারী উপ-পরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে গৃহবধূর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্বজনরা। তবে ওই এএসআই ঘুষ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
 
থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গৃহবধূর ১১ বছর ও সাত বছরের দুটি ছেলে রয়েছে। তার স্বামী বিভিন্ন ফসলের ব্যবসা করেন। এ সুবাদে তার স্বামী মাসে তিন-চার দিন বাড়ির বাইরে অবস্থান করেন। ঘটনার প্রায় দেড় মাস আগ থেকে প্রতিবেশী বখাটে তরুণ মো. ইদ্রীস আলী ওই গৃহবধূকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে গৃহবধূ রাজি না হলে ইদ্রীস মেরে ফেলার ভয় দেখান। গৃহবধূ বিষয়টি তার স্বামী ও ইদ্রীসের অভিভাবকদের জানান।
 
অভিভাবকরা ইদ্রীসকে শাসন না করে উল্টো গৃহবধূর স্বামীকে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন। ১৩ এপ্রিল রাতে গৃহবধূর স্বামী প্রতিবেশীর বাড়িতে মিলাদ মাহফিলে যান। ইদ্রীস আলী ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে জড়িয়ে ধরেন। বাধা দিলে ইদ্রীস রাগে তাকে কিল-ঘুষি মারেন। গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশী লোকজন ছুটে আসেন। তখন ইদ্রীস ঘরের জানালা ভেঙে পালিয়ে যান। ঘটনাটি জানানোর পর ইদ্রীসের অভিভাবকরা গৃহবধূর স্বামী-সন্তানদের মারতে উদ্যত হন।

Advertisement

ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামীর ভাষ্য, এ ঘটনায় রোববার দুপুরে থানায় গিয়ে তার স্ত্রী বাদী হয়ে ইদ্রীস আলীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন অভিযোগটি তদন্তের জন্য এএসআই মো. সাজুকে দায়িত্ব দেন। ওইদিন দুপুরে থানার এএসআই সাজু অভিযোগটি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি অভিযুক্ত ইদ্রীস আলীর বাড়িতেও যান।
 
তিনি বলেন, ‘আমাদের লোকজন এএসআই সাজুর সঙ্গে  ইদ্রীস আলীকে কথা বলতে দেখেছেন। সাজু ইদ্রীসের অভিভাবকদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এরপর এএসআই সাজু বাইরে এসে আমাদের লোকজনদের জানান, ইদ্রীস আলী বাড়িতে নেই। এএসআই সাজু চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইদ্রীস আলী বাড়ির বাইরে আসেন। এতে তারা সবাই অবাক হয়েছেন।’
 
‘রোববার সন্ধ্যায় গ্রামের ৫০-৬০ জন নারী-পুরুষ সঙ্গে নিয়ে আমরা থানায় যাই। সেখানে ইদ্রীস আলী ও তার বাবাকে দেখি। তারা এএসআই সাজু ও থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন। থানা থেকে ঘটনাটি আপস করতে বলা হয়। আমরা পরে জানাবো বলে থানা থেকে বেরিয়ে আসি। পুলিশের এমন আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ।’
 
ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘অভিযোগ দেয়ার সময় পুলিশের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল এখনই পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করবে। এএসআই সাজু অভিযুক্তের বাড়ি থেকে আসার পর সুর পাল্টে গেছে। এখন পুলিশ আমাকে ঘটনাটি আপস করতে চাপ দিচ্ছে। আমি আপস করতে চাই না।’
 
গৃহবধূর প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, ‘এএসআই ঘটনাস্থলে এসে বাদীপক্ষের কাছে টাকা চেয়েছিল। তবে বাদীপক্ষ এএসআইকে কোন টাকা পয়সা দেননি। এ কারণে অভিযোগের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। এরপর রোববার সন্ধ্যায় গৃহবধূ ও তার স্বামীকে  সঙ্গে নিয়ে গ্রামের ৫০-৬০ জন থানায় গিয়েছিলাম। তখন অভিযুক্ত বখাটে ইদ্রীস আলী ও তার স্বজনরা ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। আমাদের সঙ্গে ওসি থানা চত্বরে  কথা বলেছেন। তিনি আপস করতে বলেছেন। আমরা সময় নিয়ে চলে এসেছি।’
অভিযুক্ত ইদ্রীস আলী বলেন, ‘গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির ঘটনা সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ আমাকে থানায় আসতে বলেছিল। রোববার সন্ধ্যায় থানায় গিয়েছিলাম। ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে শাসন করেছেন।’
 
এএসআই সাজু বলেন, ‘গৃহবধূর শ্লীলতাহানির অভিযোগটি তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। তখন অভিযুক্ত ইদ্রীস আলী বাড়িতে ছিলেন না। সন্ধ্যায় তাকে থানায় আসতে বলা হয়েছিল। ইদ্রীস আলী ও তার স্বজনরা সন্ধ্যায় থানায় এসেছিলেন। ওসি ইদ্রীস আলীকে শাসন করেছেন। এ ঘটনাটি ওসি নিজেই দেখছেন।’
 
তবে বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

Advertisement

 
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এএসআই সাজুকে পাঠানো হয়েছিল। রোববার সন্ধ্যায় দুপক্ষের লোকজন থানায় এসেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষকে থানায় বসতে বলেছি। বাদীপক্ষ সময় নিয়েছেন। যদি বাদীপক্ষ মামলা করতে চায় তাহলে মামলা নেয়া হবে। বিষয়টি এসপিকে জানানো হয়েছে।