ভারতে ঘুরতে নিয়ে স্ত্রীকে যৌনপল্লীতে বেচে দিলেন নড়াইলের জিলানী

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),নড়াইল প্রতিনিধি,শুক্রবার, ০১ মার্চ ২০২৪ : বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতের একটি যৌনপল্লীতে ২৫ লাখ টাকায় স্ত্রীকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ এক বছর নির্যাতনের পর পালিয়ে দেশে এসে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী। তবে মামলার ‘মনগড়া’ চার্জশিটের কারণে সুবিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ২০২০ সালে। মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় নড়াইলের কালিয়া পেড়লী গ্রামের আব্দুল কাদের জিলানীর সঙ্গে। প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায় ২০২২ সালের জুলাইয়ে। তিন মাস যেতে না যেতে পরিবারিক কলহ ও মনমালিন্য দূর করতে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন স্বামী জিলানী। ওই বছর ৭ অক্টোবর ননদ ও শাশুড়ির উপস্থিতিতে দৌলতপুর থেকে স্বামীর সঙ্গে বাসে রওনা হন ভারতের উদ্দেশে।

Advertisement


ভুক্তভোগী নারী বলেন, বিয়ের পর সুখে শান্তিতে জীবন কাটছিল তাদের। মাস খানেকের মধ্যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এরপর থেকেই অশান্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ডাক্তারখানায় নিয়ে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। কয়েকদিন পর স্বামী জিলানী ফোন করে ক্ষমা চান। সম্পর্ক ভালো হলে এক পর্যায়ে ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ওই বছর ৭ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ডে শাশুড়ি, ননদ ও স্থানীয় দুই ব্যক্তির উপস্থিতিতে ভারতের উদ্দেশে রওনা হন স্বামীর সঙ্গে। এ সময় ননদ ও শাশুড়ি কিছু শুকনা খাবারও কিনে দেন। 

Advertisement

এরপর প্রথমে বাসে করে যশোর তারপর যশোর থেকে অন্য বাসে করে বেনাপোল পৌঁছান। সেখানে কিছু লোকজনের সহায়তায় একটি জঙ্গল এলাকা দিয়ে বর্ডার পার হয়ে অবৈধ পথে ভারতে নিশান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। সেখানে ৩-৪ দিন থাকার পর নিশান ও জিলানী তাকে ভারতের মুম্বাই শহরের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। চলাচলের সুবিধার্থে ভারতীয় আধার কার্ডও বানিয়ে দেন। এরপর ওই বাড়িতে রেখে বাজার করার কথা বলে নিশান ও জিলানী বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।
ওই নারী আরও বলেন, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও তারা ফিরে না এলে আকস্মিকভাবে সেখানে অপরিচিত কয়েকজন এসে তার ঘরে প্রবেশ করে। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে যে, তার স্বামী ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর তিনি কান্নাকাটি শুরু করলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। ওখানকার লোকজন তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং জোর করে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য করে। 

Advertisement

পরবর্তীতে স্বামীকে কল করে তার সঙ্গে এ কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তাকে গালাগালি দিয়ে বলে, ‘তোর সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। তুই ওখানে পড়ে থাক এবং ওদের হাতেই ধুকে ধুকে মর।’
এভাবে অনেক দিন চলার পর এক পর্যায়ে ওখানে থাকা এক বাঙালির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তার সহযোগিতায় প্রায় এক বছর পর ওখান থেকে পালাতে সক্ষম হন। দেশে ফিরে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়ি নড়াইলে গিয়ে বিচার পাননি। এরপর খুলনার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল আদালতে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের নামে মামলা করেন।
মামলার তদন্তের ভার পায় পিবিআই। তবে ওই নারীর অভিযোগ, প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, তার স্বামী তাকে যশোর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি ভারতে গিয়ে বিক্রি করেননি। আর শাশুড়ি ও ননদ দৌলতপুর বাসে তুলে দিলেও তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ। 
এদিকে অভিযুক্তের এলাকাবাসীরা বলছেন, ন্যায় বিচার পাননি ভুক্তভোগী। আর সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন শাশুড়ি। তার ভাষ্য, ওই মেয়ে নিজের ইচ্ছায় ভারতে গিয়েছেন। এসব বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তার ছেলে ঢাকার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। গত ডিসেম্বর মাসে ওই মেয়ে বাড়িতে এসে ঝামেলা করেন। তার ছেলে সে সময় তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

Advertisement


এদিকে খুলনার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল আদালতের বিশেষ পিপি সুমন্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, অনেক সময় দেখা যায় দুর্বল চার্জশীটের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। আর আমাদের কাছে চার্জশীট প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর মামলাটি আসে। ফলে তখন আর পরিবর্তনের কোনও সুযোগ থাকে না।