মেট্রোরেলের ছোঁয়ায় কিছুটা স্বস্তি উত্তরা-মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিলে (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৪ : উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব স্টেশনেই মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছে শনিবার (২০ জানুয়ারি) থেকে। প্রথমদিনই মেট্রোরেলের সব স্টেশনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে জটলা থাকে রাজধানীতে। তবে সেই জটলার মধ্যে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে মেট্রোরেল রুটের ২০ কিলোমিটার পথে। বিশেষ করে উত্তরা উত্তর থেকে মিরপুরের পল্লবী-মিরপুর-১০-আগারগাঁও-ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার ও মতিঝিল পর্যন্ত। মূলত মেট্রোরেল পুরোদমে চালু হওয়ার কারণে সড়কের চাপ কিছুটা কমেছে। কারণ অনেক যাত্রী প্রাইভেটকার ছেড়ে মেট্রোরেল ব্যবহার করছেন।

Advertisement

রোববার (২১ জানুয়ারি) মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) কর্মরত এক কর্মকর্তা বসবাস করেন মিরপুর পল্লবী এলাকায়। তিনি অন্যান্য সময় প্রাইভেটকারে করে নির্বাচন কমিশনে এলেও এখন মেট্রোরেলে চড়ে অফিস করেন।

ওই কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার অনেক খরচ কমে গেছে। এখন ড্রাইভারও রাখি না। মাত্র ৩০ টাকা খরচ করে বাসা থেকে আগারগাঁও আসি। এরপর আগারগাঁও থেকে হেঁটে অফিস করি। হাঁটার কারণে শরীর ফিট থাকে, অন্যদিকে খরচও কমেছে। ড্রাইভার, তেল খরচসহ কত টাকা সাশ্রয় হয়েছে তা প্রকাশ করার মতো নয়।’

রোববার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট। এই সময়ে সচরাচর জটলা লেগেই থাকে ফার্মগেট-কারওয়ান বাজারে। তবে সেই চিরচেনা জটলায় কিছুটা স্বস্তির ছাপ দেখা গেছে এদিন।

ফার্মগেট এলাকায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চর্মকারের কাজ করেন শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বাস। অন্যান্য দিন জটলা থাকলেও আজ তেমন জটলা চোখে পড়েনি বলে দাবি তার। শ্রীকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ১৫ বছর এই ফার্মগেট এলাকায় জুতা-স্যান্ডেলের কাজ করি। অন্য দিন ফার্মগেট এলাকায় জটলা লেগেই থাকতো। কিন্তু আজ কোনো ভিড় চোখে পড়েনি। তবে ভিড় না থাকায় আজ তার আয়ও কম হয়েছে বলে দাবি করেন।

jagonews24

ফার্মগেট থেকে একটু দূরে মোজা-টুপিসহ শীতের পোশাক বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ একরামুল হক। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ফার্মগেটে সড়কের পাশে তিনি নানা সিজনাল পণ্য বিক্রি করছেন। ভিড় কম প্রসঙ্গে মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, আজ যানজট নেই। কী কারণে যানজট নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ উপরে ট্রেন (মেট্রোরেল) চলছে বেশি বেশি।

Advertisement

একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন রনি দাশ। মোটরসাইকেলে মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে নিয়মিত অফিস করেন তিনি। অন্যান্য দিন এই সড়কে জটলা চরমে থাকলেও রোববার কিছুটা স্বস্তি মিলেছে বলে দাবি রনি দাশের। মতিঝিল এলাকায়ও প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে। সেখানে জটলা দেখা গেলেও চরম মাত্রার নয়। ক্রসিংগুলো স্বল্প সময়ে ছেড়ে দিতে দেখা যায়।

উত্তরা-মতিঝিল সড়কে চলাচলকারী অনেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ছেড়ে মেট্রোরেলে যাতায়াত করায় এই পথে যানজট অনেক কমেছে বলে জানা গেছে।

মেট্রোরেলে উত্তরা থেকে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। আর উত্তরা থেকে সচিবালয় স্টেশনের ভাড়া ৯০ টাকা। উত্তরা থেকে ফার্মগেটের ভাড়া ৭০ টাকা।

এছাড়া আগে থেকে চালু হওয়া উত্তরা নর্থ স্টেশন (দিয়াবাড়ি) থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৬০ টাকা।

এ অংশের মাঝখানের সাতটি স্টেশনের জন্য আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও বিদ্যুৎচালিত এ গণপরিবহনে ভ্রমণের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

Advertisement

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকি টাকা সরকার দেশীয় উৎস থেকে ব্যয় করবে। মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন। স্টেশনগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। ১৬টি স্টেশনেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থামছে স্বপ্নের মেট্রোরেল।