শিমুর তৈরি জ্বালানি সাশ্রয়ী ‘জাদুর বাক্স’ (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ,শনিবার, ১৯ আগস্ট ২০২৩ : সারা বিশ্বে যখন জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে ঠিক তখনই সাড়া ফেলেছে সিমশন সাহা শিমুর তৈরি জ্বালানি সাশ্রয়ী ডিভাইস। এটি এলাকায় ‘জাদুর বাক্স’ নামে পরিচিত। যে কোনো সেচ পাম্পের সঙ্গে এই ডিভাইসটি (বক্স) জুড়ে দিলে কমপক্ষে ৮০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব বলে দাবি আবিষ্কারক শিমুর।

Advertisement

তিনি বলেন, সাধারণত ফোর হর্স সাইজের ছোট একটি শ্যালো মেশিন ও ৩ ইঞ্চি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লিটার পানি উত্তোলন করা যায়। সেখানে এই পাওয়ার ডিভাইসটি একই মেশিন ও পাম্পের সঙ্গে জুড়ে দিলে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ লিটার পানি উত্তোলন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং সরকারের এটুআই পরীক্ষায় যার প্রমাণ মিলেছে, মিলেছে সনদও। তারপরেও এখন পর্যন্ত মেলেনি সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা। যোগ করেন শিমু।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, শিমুর ডিভাইসটি সরকারি অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন কৃষকদের আর্থিক লোকসান কমবে, অন্যদিকে জ্বালানি সাশ্রয় হবে। এতে কৃষক ও সরকার উভয়ই লাভবান হবে।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের নারকেল বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সিমশন সাহা শিমু। এলাকার একটি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করে চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে একটি কারিগরি কলেজে পড়াশোনা করলেও অর্থের অভাবে বেশি দূর এগোতে পারেননি। এরপর তিনি একটি মেশিনারিজ দোকানে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে রপ্ত করেন বিভিন্ন মেশিন মেরামতের কাজ।

১৯৭৯ সালে গোপালগঞ্জ এসে জমি সেচের ব্লক সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত ডিজেলের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে কৃষকেরা তার কাছ থেকে পানি নেয়া বন্ধ করে দেয়।

সেই আক্ষেপ থেকে নিজের ব্যবহৃত বাইসাইকেল প্যাডেল করে উদ্ভাবন করে ফেলেন জ্বালানি ছাড়াই সেচযন্ত্র। কিন্তু সেটি অনেক কষ্টসাধ্য হওয়ায় এ বিষয়ে আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দেন। পরে রপ্ত করা কৌশল দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় ডিভাইস (বক্স) তৈরি করেন। পরে তা ১০ বার পরিবর্তন করে বর্তমান ডিভাইসটি (বক্স) তৈরি করেন।

Advertisement

 

সাধারণ পাম্প দিয়ে এক লিটার জ্বালানি তেল খরচ করে যে পরিমাণ পানি উঠানো যায় সেখানে এ ডিভাইসটি যুক্ত করে পানি উঠালে অন্তত ১৪ গুণ বেশি পানি উঠানো সম্ভব।

ইতিমধ্যে এ ডিভাইস দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কৃষিতে অবদান রাখায় ২০০৮ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কার পান তিনি। পরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়ে আবেদন করলেও মেলেনি সাড়া। এতে এই প্রযুক্তি যেন মুখ থুবড়ে পড়তে চলছে।

 

সিমশন সাহা শিমু বলেন, সাধারণ পাম্প দিয়ে সেকেন্ডে পয়েন্ট ২৫ কিউসেক পানি উত্তোলন করা গেলেও এ বক্স সংযুক্ত করে দিলে সেকেন্ডে এক দশমিক শূন্য ছয় কিউসেক পানি উত্তোলন করা যায়। ডিভাইসটি পরীক্ষার জন্য এটুআই ও বুয়েটে পাঠানো হলে এর কার্যকারিতার প্রমাণ মেলে, পাই সনদও।

তিনি বলেন, ডিভাইসটি ব্যবহার করলে কৃষকেরা অন্তত ৮০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারবেন। এতে জ্বালানি ও সময় দুটোই বাঁচবে। একটি ডিভাইস (বক্স) তৈরি করতে খরচ পরে ১২-১৩ হাজার টাকা। এর স্থায়িত্ব কমপক্ষে ৭ বছর। সারা বাংলাদেশে এ ডিভাইসটি ছড়িতে দিতে অন্তত দেড় কোটি টাকার প্রয়োজন।

শিমু আরও বলেন, দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় ডিভাইসটি তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে মেলেনি কোনো সহায়তা।

Advertisement

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কাদের বলেন, শিমুর ডিভাইসটি সেচ পাম্পে ব্যবহার করলে উৎপাদন খরচের পাশাপাশি কৃষকের সময় বেঁচে যাবে। যেখানে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে একঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ফলে সময় লাগবে ২৫ মিনিট। পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয় হবে ৮০ ভাগ। ডিভাইসটি তৈরি করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে যেমন জ্বালানি সাশ্রয় হবে অন্যদিকে কৃষকেরা অর্থিকভাবে লাভবান হবেন।