দূতাবাসে অবাধ বিচরণ হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ জামিলের বিরুদ্ধে (ভিডিও)

SHARE

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে জামিল আহমেদ (লালবৃত্ত)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেয়া

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ : হঠাৎ করেই আলোচনায় চলে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেলো জামিল আহমেদ। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তার অ্যাকাউন্ট থেকে জানা গেছে, জামিলের কাছের আত্মীয় নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুত তাহরিরের সদস্য। আর পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে নিষিদ্ধ সংগঠনটিকে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানেই অতিথি হিসেবে থাকেন জামিল আহমেদ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গেও তাকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে দেখা গেছে।

ADVERTISEMENT

ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেকে প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন জামিল। সিলেটে জন্ম নেয়া জামিল মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফুলব্রাইট হামফ্রি ফেলো। লেখাপড়া করেছেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।

জানা গেছে, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও সাভারে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন জামিল। বাংলাদেশ কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমিতেও ক্লাস নিতে দেখা গেছে তাকে।

দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আমেরিকান দূতাবাসেও অবাধ বিচরণ জামিল আহমেদের। তার স্ত্রী ফারহানা চৌধুরী থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের ইস্ট ল্যানসিংয়ে। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমন তথ্যই মিলেছে।

সারা বিশ্বের খিলাফত আন্দোলনের একটি সংগঠন হিজবুত তাহরির। এটির সম্মুখসারির কর্মী ও সংগঠক এমদাদ ইবনে করিম। যাকে ব্রাদার-ইন-ল (শ্যালক) হিসেবে উল্লেখ করা আছে জামিলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। এমদাদের অ্যাকাউন্টেও একই কথা লেখা। অর্থাৎ, তাদের দুজনের সম্পর্ক শ্যালক কিংবা দুলাভাই যেকোনো একটি। তার মানে তারা কাছের আত্মীয়, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় জামিল আহমেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লকড করা থাকলেও এমদাদেরটি পাবলিক (প্রকাশ্য) করে রাখা আছে।

এমদাদের ফেসবুকে তিনি কোথায় পড়েছেন, কোথায় বাড়ি, কোথায় থাকেন, সবকিছু গোপনীয় করে রাখা আছে। শুধু পোস্টগুলো প্রকাশ্য করে রাখা হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, দেশের বাইরে থেকে হিজবুত তাহরিরের হয়ে কাজ করেন তিনি। যে কারণে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে চান না। এছাড়া তাকে হিজবুত তাহরির ব্রিটেনের ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট শেয়ার দিতে দেখা গেছে।

দুজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হিজবুত তাহরিরের সব তথ্য পোস্ট করেন এমদাদ। এমনকি নিষিদ্ধ সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কর্মসূচিও তার ফেসবুক থেকে সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে।

হিজবুত তাহরির একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেসবুকে তারা (এমদাদ ও জামিল) ইংরেজিতে একটি নতুন পেজ খুলেছেন। যার নাম ‘স্ট্যান্ড ফর খিলাফাহ’। এখানেই সব ধরনের জিহাদি তথ্য, মতামত প্রকাশ করেন এমদাদ। সেগুলো আবার নিজের আইডিতে শেয়ার করেন।

প্রশ্ন হলো, হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে জামিল আহমেদের সম্পর্ক কী? বলা হয়, জামিল আহমেদ কখনোই হিজবুতের কোনো কর্মসূচিতে যান না। ছবিও তোলেন না। তার কাজ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে বসে দূতাবাসগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা। এর মধ্য দিয়ে তার কাছের আত্মীয় এমদাদকে সহায়তা করা।

গত ৩ ডিসেম্বর ‘জনগণের দুর্দশায় নিমজ্জিত রেখে আওয়ামী-বিএনপি নেতাদের রাজনৈতিক খেলা নিশ্চিত প্রতারণা’ শিরোনামে হিজবুত তাহরিরের জঙ্গি পোস্টার শেয়ার করেন এমদাদ। গেল ২২ নভেম্বর হিজবুতের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও শেয়ার করতে দেখা গেছে তাকে।

ADVERTISEMENT

রোববারও (১৫ জানুয়ারি) হিজবুত তাহরির ব্রিটেনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট শেয়ার দেন এমদাদ। এভাবে প্রতিনিয়ত আরবি, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় হিজবুত তাহরিরের জঙ্গি পোস্টগুলো শেয়ার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এ নিয়ে জানতে জামিল আহমেদের ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠানো হলে কোনো সাড়া মেলেনি। পরে সেখানে লেখা আসে, দিস পারসন ইজ নট কন্টাকটেবল অন মেসেঞ্জার। অর্থাৎ, মেসেঞ্জারে এই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়।

ফেসবুকে এমদাদের বন্ধুতালিকায় ঢাকার কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককেও দেখা গেছে। 

জননিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও রাশিয়া, তুরস্ক ও মিশরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এই উগ্রবাদী সংগঠনটি।
https://youtu.be/OVgxl0eK2e4