ডা. মুরাদের পড়াশোনা, রাজনীতি ও সমালোচনা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১ : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সকালের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকৃত, যৌন হয়রানিমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের জেরে তাকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পরপরই ডা. মুরাদ সম্পর্কে কৌতুহল বেড়েছে সর্ব মহলের। সেই চাহিদা নিবৃত্ত করতে তার জন্ম, পরিচয়, পড়াশোনা, রাজনীতি, সমালোচনা তুলে ধরা হলো-

১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর জামালপুরের সরিষাবাড়ীর দৌলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ডা. মুরাদ। তার বাবা মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন বরেণ্য রাজনীতিবিদ, শিক্ষানুরাগী,  প্রখ্যাত আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি।

জামালপুরের কিশলয় আদর্শ বিদ্যা নিকেতনে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন ডা. মুরাদ। ১৯৯০ সালে জেলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৯২ সালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পাস করেন তিনি।

এরই মধ্যে ২০০০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখার ‘সভাপতি’ হন ডা. মুরাদ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। আর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

২০১৪ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’ হন ডা. মুরাদ। ২০১৭ সালে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সাংসদ হন ডা. মুরাদ। ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-এর আজীবন সদস্য। এছাড়া সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিয়মিত টেলিভিশনে টকশো, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে ডা. মুরাদ এক মেয়ে ও ছেলের বাবা। তার স্ত্রী জাহানারা এহসানও পেশায় চিকিৎসক। তবে মূলত একের পর এক বিতর্কিত ও বেসামাল মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি।

বেশ কিছুদিন আগে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকা, না থাকা নিয়ে এক ভিডিওবার্তায় মন্তব্য করে সমালোচিত হন ডা. মুরাদ। পরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা বলিনি যা আমার প্রিয় ধর্ম ইসলামের বিপক্ষে যায়।’

কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন ও বর্ণবাদী বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ। যার বেশিরভাগই প্রকাশযোগ্য নয়। তবে সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মুখ ভীষণ খারাপ।’

যা নিয়ে দেশজুড়ে সব মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে একটি টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়। একই  মাধ্যমে যা ছড়িয়ে পড়ে। তাতে একজন চিত্রনায়িকাকে নানা অশোভন কথাবার্তা ও হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তির কণ্ঠ শুনে তিনি ডা. মুরাদ হাসান বলে মনে করছেন অনেকে।

এর এক পর্যায়ে গত শনিবার এক টিভি টকশো’তে বিএনপির সাবেক সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ এবং তার ‘চিকিৎসা দরকার’ বলে মন্তব্য করেন  মুরাদ হাসান। এতে দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধে।

সাম্প্রতিক তিন ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল অফলাইন-অনলাইন। এজন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন নারী অধিকারকর্মী, বিএনপি থেকে শুরু করে সরকারদলীয় প্রভাবশালী অনেক নেতা। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। এমনকি অভিযোগ অস্বীকার করেন ডা. মুরাদ। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে মন্ত্রিত্ব হারিয়ে।