১০ মিনিটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ মেলে নীলক্ষেতে!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৮ নভেম্বর ২০২১ : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ পাঁচ হাজার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ ১০ হাজার টাকা। বানানো যাবে যে কোনো দলিল দস্তাবেজের হুবহু কপিও। সময় লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। মূল সনদে থাকা নাম, রোল নম্বর পরিবর্তন করে মনগড়া নাম, নম্বর ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে নকল সনদ। নকল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, আইনের আওতায় আনা হবে নকল সনদধারীদেরও।

একটি মাধ্যমিকের সনদ পেতে একজন শিক্ষার্থীর অপেক্ষা করতে হয় ১০ বছর। এর পেছনে থাকে অনেক শ্রম, মেধা আর আর্থিক বিষয়। অথচ নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেটের এক দোকানি মাত্র ১০ মিনিটেই তৈরি করে ফেলেন সেই সার্টিফিকেট। খরচও সামান্য। ব্যক্তিভেদে পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা।

গত পাঁচ বছর ধরে এভাবেই যে কোনো পাবলিক পরীক্ষার জাল সনদ তৈরি করে আসছেন তিনি। একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার আর কিছু কাগজপত্র। বিনিয়োগ এতটুকুই।

তিনি বলেন, কাস্টমার যখন আসেন, তার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে এখানে টাইপ করি। কোন গ্রুপ নেবে, সেটা বসাই। পয়েন্ট, জন্মতারিখ ইত্যাদি দিয়ে প্রিন্ট করে সরবরাহ করি।

জাল সার্টিফিকেট তৈরি চক্রের প্রধানসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তিন ধাপে কাজ করে চক্রটি। প্রথম ধাপে তারা সনদপ্রত্যাশীদের খুঁজে বের করেন। মাঝখানে থাকে একটি দালাল শ্রেণি, যাদের কাজ চুক্তি করা। শেষ ধাপে থাকে কিছু কম্পিউটার কম্পোজের দোকানি।

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক থেকে শুরু করে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদালয়ের সব সনদই তৈরি করে চক্রটি। জমির জাল দলিল বানাতেও দক্ষ তারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিজুল হক বলেন, প্রতারণার এই কাজটি সম্পন্ন হয় তিন ধাপে। প্রথমত, বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা লেখাপড়া না করে অবৈধভাবে সনদ পেতে চায়, তাদের সংগ্রহ করা। এই গ্রুপটা ঢাকায় একটা দালাল গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই দালাল গ্রুপ আবার তাদের কাছ থেকে এগুলো তৈরি করে। মাঝখানে একটা দালাল গ্রুপ আছে, যে গ্রুপটাকে পৃষ্ঠপোষক করে বাকি দুই গ্রুপই। যারা এটা তৈরি করে, তাদের লোক এবং ভুয়া সনদ যাদের প্রয়োজন হয়, তারাও দালাল গ্রুপটার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মূলত কাজটি একটি চুক্তির ভিত্তিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, সনদগুলো এমনভাবে বানানো হয়, যেখানে খালি চোখে দেখে আসল-নকল বুঝতে কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে যে চাকরিগুলো আছে, যেখানে সনদগুলো যাচাইয়ের সুযোগ কম, সেখানে তারা এসব সনদ দিয়ে চাকরি করেন।

পুলিশ বলছে, নকল সনদপ্রত্যাশীরাও সমান অপরাধী। আইনের আওতায় আনা হবে তাদেরকেও। নিয়োগের আগে সার্টিফিকেট যাচাই করার পরামর্শ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই অপরাধী। পাশপাশি সহযোগীরাও সমান অপরাধী। এ ধরনের সনদ গ্রহণকারীরা হয়তো, এসব সনদ দিয়ে কোনো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বা কোথাও চাকরির জন্য আবেদন করছে বা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও হতে পারে। যারা চাকরি দেবে, তারাও যেন যথাযথ যাচাই করে নেয়। না হলে দেখা যাবে কি, এখানে একজন ভুয়া লোখ ঢুকে যাবে। যেহেতু তারা যে কোনো সনদই বানাতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, জেনেশুনে এ ধরনের ভুয়া সনদ বিক্রি ও গ্রহণ করা বড় ধরনের প্রতারণা। এভাবে নকল সনদ দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীর নীলক্ষেতকেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ জাল সার্টিফিকেট চক্রের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দারা।