ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,০৯ জুলাই : প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে ভারত কিছুতেই হস্তক্ষেপ করবে না বলে তারা নিশ্চিত।দিল্লি সফরে এসে বাংলাদেশের এই প্রভাবশালী নীতি-নির্ধারক বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও দাবি করেছেন, অতীতে যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ভারতের তাঁবেদার’ বলে আক্রমণ করা হত সেই দিন আর নেই – কারণ দুই দেশের সম্পর্ক এখন ‘সমানে-সমানে।’জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গী বিএনপিকেও ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন, যদিও বিএনপি নেতৃত্ব তার এই বক্তব্যকে ‘সম্পূর্ণ অবান্তর’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে।বিএনপির কথা হলো, তাদের সম্পর্কে ভারতের কী মনোভাব সেটা দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে – এইচ টি ইমাম নন।তিন দিনের সফরে দিল্লিতে এসে এইচ টি ইমাম ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে যেভাবে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কিংবা নানা থিঙ্কট্যাঙ্কে মতবিনিময় করেছেন, সেটা যে দুই সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার আর একটা প্রমাণ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।তবে এইচটি ইমাম বিবিসিকে বলছিলেন, দুই দেশের সম্পর্ক এখন সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনেও নাক গলাতে চাইবে।তিনি বলেন, ‘একটা বিষয়ে আমরা সব সময় বিশেষ খেয়াল রাখি, তা হলো আমরা কেউ কারো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা এ রকমও চাইব না যে আমাদের নির্বাচনে বাইরের কেউ হস্তক্ষেপ করুক।’এইচ টি ইমাম বলেন, ‘ভারত হলো আমাদের ঘনিষ্ঠতম মিত্র। বাংলাদেশে যেমন নির্বাচন, তেমনি ভারতেও সামনে নির্বাচন আসছে। এই পটভূমিতে ধরেই নেওয়া যায় বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারে ভারত খুবই উল্লেখযোগ্যভাবে উল্লিখিত হবে, তাই না?’তিনি বলেন, ‘সবাই বলবে এই সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে অমুক হল, তমুক হল। আগে তো তাঁবেদার সরকার এ রকম আরও কত কী বলা হয়েছে, কিন্তু এখন আমরা ইক্যুয়াল পার্টনারস, সমান – এই জিনিসটা তো আমরা ভোটের প্রচারে অবশ্যই বলব।’
তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটির এই কো-চেয়ার সেই সঙ্গেই জানাচ্ছেন, ভারতের নির্বাচনে দলগুলো কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করে, কীভাবে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যায় বা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কোন রাস্তা নেয় – সেগুলো নিয়ে তাদের দলের ভেতরেও আলাপ-আলোচনা হয়।দলীয় স্তরেও ভারত ও বাংলাদেশের দুই ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও তিনি গোপন করছেন না, কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলছেন, ‘সরকারিভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই, আমরাও তা কখনো চাই না!’এদিকে গত মাসেই বিরোধী বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ভারত গিয়ে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হয় সেটা যেন তারা দেখেন।এই ‘সহায়তা’ চাওয়ার মধ্যে দিয়ে বিএনপি ভারতের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চাইছে বলেও পর্যবেক্ষকরা ধারণা করেছিলেন।এইচ টি ইমাম কিন্তু বলছেন, বিএনপি এখন জামায়াতে ইসলামীর একটা ‘এক্সটেনশন’ মাত্র, এমন একটি দলকে ভারত কিছুতেই ভরসা করবে না।‘যত যা-ই বলুন না কেন, বিএনপির ঘাড়ে জামায়াতে ইসলামী এমনভাবে সওয়ার হয়েছে যে তারা আর তা থেকে বেরোতেই পারছে না। এখন তো বিএনপির নিজস্ব কর্মীও নেই, রাস্তাঘাটে যে সব কাজকর্ম তারা করেন – সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই হোক বা বিক্ষোভ প্রদর্শন, শিবির ছাড়া তো তাদের এক পা-ও চলে না!’‘এই শিবির হল জামায়াতের ছাত্র ফ্রন্ট – যারা খুব প্রশিক্ষিত একটা ক্যাডার বাহিনী। আগে রগ কাটত, এখন গ্রেনেড ছোড়ে, বোমা মারে, মলোটভ ককটেল বানায় – এই সব নানারকম!’‘এ রকম একটা সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে ভারতের সরকারের বা ক্ষমতাসীন দলের কিছু করার থাকবে বলে তো আমার মনে হয় না! এ রকম আত্মঘাতী পদক্ষেপ কেউ নেবেন বলে তো আমার মনে হয় না’, বলছেন এইচ টি ইমাম।
খবর বিবিসি বাংলা