কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে শেষে ঢাকায় ফিরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

SHARE

405কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকায় ফিরেছেন। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একথা জানিয়েছে। গত ২৭ থেকে ২৯ নভেম্বর মাল্টার রাজধানী ভ্যালেটায় কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের ২৪তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, এমপি।

এই শীর্ষ সম্মেলনে কমনওয়েলথ-এর রাজনৈতিক মূল্যবোধ যথা-গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং কমনওয়েলথ উন্নয়ন মূল্যবোধ যথা- টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০, টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন, অভিবাসন; বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ যথা জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদসহ কমনওয়েলথ এর অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় ও এর কয়েকটি উদ্যোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। এ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ৩১ জন রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেন।

শীর্ষ সম্মেলনের পূর্বে কমনওয়েলথ পররাষ্ট্র মন্ত্রীগণের দু’দিনব্যাপী (২৫-২৬ নভেম্বর-২০১৫) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমনওয়েলথ উন্নয়ন মূল্যবোধ শীর্ষক বৈশ্বিক উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ এর আওতায় ‘সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ’ এর আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী উল্লেখ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে যা মনুষ্য সৃষ্ট স্থানীয় জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা করছে।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, জঙ্গিবাদ দমনে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও ব্যক্তি খাতের উপদেশমূলক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অভিবাসন শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, অভিবাসী কর্মীরা শুধু স্বাগত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেই ভূমিকা রাখছে না বরং তাদের নিজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখছে।

তিনি উল্লেখ করেন, সামগ্রিক অভিবাসন বিশেষত নারী অভিবাসন প্রক্রিয়া নিরাপদ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) বাস্তবায়ন’ শীর্ষক আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহযোগিতা, সক্ষমতা অর্জন ও ঋণ মওকুফ প্রয়োজন। তিনি এ ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সকল উৎস হতে অর্থায়ন এবং ODA-এর অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন যে, উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক অর্থায়ন SDGs বাস্তবায়নে গেম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করতে পারে। স্বল্পোন্নত, ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র, স্থলবেষ্টিত এবং আফ্রিকান দেশসমূহের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ কর্তৃক নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধির সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-এর সাথে সাক্ষাত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা ও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেন এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য যে, ১৩ বছর বয়সে তাঁর বাবা কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে তিনি বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন স্বচোখে প্রত্যক্ষ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন।

এছাড়াও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সাথে এন্টিগুয়া ও বারবুডা-এর প্রধানমন্ত্রী, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ব্রিটিশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রী, কানাডিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বতসোয়ানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথকভাবে সাক্ষাত করেন। বৈঠকসমূহে কমনওয়েলথ ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ঘটনাবলি ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হামন্দ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদারকরণ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে যৌথভাবে কাজ করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করেন।

ব্রিটিশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাতে উল্লেখ করেন যে, তিনি একটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিসহ ২০১৬ সালের প্রথম কোয়ার্টারে বাংলাদেশ সফর করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নবনিযুক্ত কানাডিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন দিওনকে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বর্তমান সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে দৃঢ় অবস্থানের বিষয়টি অবহিত করেন।