ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,৩১ অক্টোবর : সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রায় ৫ বছর পর সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ইসি। আজ থেকে আবেদন নেয়া শুরু হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ফরমে দলগুলোর আবেদন গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের পর কোন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন গ্রহণ করবে না কমিশন।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে মার্চে নতুন দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যর কমিশন।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে নির্বাচন কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এবার শুধু নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন নেবো না, সাথে বর্তমানে যে ৪০ দল নিবন্ধিত আছে সে সব দলের কাছে হালনাগাদ তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে। এ কারণে মঙ্গলবার আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে ইসি।
গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৮ এর বিধান অনুযায়ী বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০টি। আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে অনেক দলের কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের অফিস-কমিটি দিয়েছে। কিছু দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটি বহাল রয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এসব দল শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা তা তদারকি করবে ইসি। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবরের পর শুরু হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নিবন্ধীকরণে আগ্রহী রাজনৈতিক দলকে স্বীয় লেটারহেড প্যাডে দরখাস্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিবন্ধীকরণের উদ্দেশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে আবেদনের সঙ্গে (ক) দলের গঠনতন্ত্র (খ) দলের নির্বাচনী ইস্তেহার, যদি থাকে (গ) দলের বিধিমালা, যদি থাকে (ঘ) দলের লোগো এবং পতাকার ছবি (ঙ) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের নাম এবং পদবী (চ) দলের নামে রক্ষিত ব্যাংকের নাম, একাউন্ট নম্বর ও সর্বশেষ স্থিতি (ছ) দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ (জ) দলের নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য ক্ষমতা প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র (ঝ) নিবন্ধন ফি বাবদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবরে জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে ১) একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা ২) যে কোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে, অথবা ৩) দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, দেশের অন্তত এক তৃতীয়াংশ ২১ টি প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে।
রাজনৈতিক দলকে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর উক্ত দলকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করে কমিশন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হয়। এই শর্ত মেনে ৪২টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় অনেক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কোন কার্যালয়ও নেই। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোন নির্বাচনে একটি আসনও পায় নি। নিবন্ধনের শর্ত অনেক রাজনৈতিক দলই মানে নি। দলের সর্বশেষ অবস্থায়ও কমিশনকে অবহিত করেনি দলগুলো। এবার এগুলো তদারকি করবে কমিশন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। কিন্তু ৪১টিই দল নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতা’ প্রমাণ করতে পারেনি। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপরে তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দু’টি হলো-বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
সর্বপ্রথম ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছিল নির্বাচন কমিশন। ওই সময় ১১৭টি দল আবেদন করে এবং পরে খসড়া গঠনতন্ত্র জমা দিয়ে ৩৯টি দল নিবন্ধিত হয়। সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা না দেয়া এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্রীডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে কমিশন। উচ্চ আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএ কে নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল।