মেঘনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সৎ ভাইকে হত্যা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ৫

SHARE

22492036_1596602943723275_7841724791848567062_n-300x117ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,২০ অক্টোবর : কুমিল্লা জেলার মেঘনায় প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে ট্রলার চালক আমির হোসেন (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে তারই সৎ ভাই দেলোয়ার হোসেন (দিলু ডাকাত) সহযোগীদের নিয়ে হত্যা করে। পরে ঘাতক চক্রটি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সহযোগিতা চাইতে এসে নিজেরাই ফেঁসে যায়। এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া ২ ঘাতক ছাড়াও অন্যান্যভাবে সহায়তাকারী চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফসহ আরও ৩ জনকে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এ হত্যাকান্ডের রোম হর্ষক কাহিনীর বর্ননা দেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত ১৫ অক্টোবর রাতে উপজেলার চালিভাঙ্গা (ইসলামপুর) গ্রামের হানিফ মিয়ার পুত্র দেলোয়ার হোসেন তার প্রতিপক্ষ একই এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুনসহ তার গ্রুপের লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে সহযোগীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায় গোপন বৈঠক করে। পরে দেলোয়ার তার সৎ ভাই আমির হোসেন (৪২) কে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নৌকা দিয়ে সোনারগাঁ এলাকায় ডেকে নেয়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা বলে মেঘনা উপজেলার পাগাড়ি পাড়া এলাকায় খালে এসে নৌকার ভেতরই আমির হোসেনকে চাপাতি ও ছোরা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ পানিতে ফেলে দেয় ঘাতক চক্র। কিন্তু দেলোয়ার ঘটনা গোপন রেখে তাদের উপর প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়েছে বলে এলাকা ও পুলিশে খবর দেয়। এদিকে গত ১৭ অক্টোবর ওই খাল থেকে থানা পুলিশ আমির হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে। একই দিন দুপুরে নিহতের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, মরদেহ উদ্ধারের দিন
স্থানীয় চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ সরকার ও মেম্বার নুরুল ইসলামকে নিয়ে দেলোয়ার হোসেন আমার কার্যালয়ে এসে ঘটনার উল্টো বর্ননা দিয়ে হত্যাকান্ডের জন্য তাদের প্রতিপক্ষ হুমায়ুন চেয়ারম্যান গ্রুপকে দায়ী করে। এ সময় তাদের বক্তব্য সন্দেহজনক হওয়ায় জেলা গোয়েন্দা শাখায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসে। ফলে গ্রেফতার করা হয় ঘাতক, পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উৎঘাটন ও গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী পুলিশ (দাউদকান্দি সার্কেল) মহিদুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একেএম মঞ্জুর আলম, মেঘনা থানার ওসি শামসুদ্দিন আহমেদ, ডিবির এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি মো. আলমগীর হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) আমিরুল্লাহ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ জানান, প্রধান ঘাতক দেলোয়ার ও তার সহযোগীরা এলাকার চিহিৃত সন্ত্রাসী। বিগত কয়েক বছর আগে সন্ত্রাসী দেলোয়ারের হাতেই তার বাবা হানিফ খুন হয়েছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাকে নিয়ে নারায়নগঞ্জে অভিযান চালিয়ে অপর ঘাতক একই গ্রামের মানিক (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। দেলোয়ার ও মানিক বুধবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আরাফাত উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত অপর আসামীরা হচ্ছে, 60e3স্থানীয় চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ সরকার (৫৫), পরিষদের সদস্য নুরুল আমিন মেম্বার (৪৫),একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম (২৪)।

এদিকে আমির হোসনের সকল ঘাতক এবং পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকায় মানববন্ধন-বিক্ষোভ করেছে এলাকার সর্বস্তরের জনগন।