মেঘনা উপজেলায় প্রসূতি মাদের অস্ত্রপাচার শরু হয়েছে

SHARE

clip_image001ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৪ আগস্ট : কুমিল্লা জেলার দুর্গম চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত মেঘনা উপজেলা। উপজেলাটির চারদিকে পানিবেষ্টিত। নৌকা-ট্রলার ছাড়া দ্রুত যাতায়াত সম্ভব নয়। জেলা সদর থেকে ৮১ কিলোমিটারে দূরে উপজেলাটি অবস্থিত। ১৯৯৮ সালে উপজেলা হিসেবে গঠিত হবার পর গত ১৯৯৬ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত ১১ বছরেও ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দক্ষ জনবলসহ ও প্রয়োজনীয় ষন্ত্রপাতির অভাবে কোন প্রসূতির অস্ত্রপাচার করা হয়নি। আবার উপজেলাটিতে নেই কোন বেসরকারি ক্লিনিক। এতে করে ওই দুর্গম চরাঞ্চলে প্রসূতির অস্ত্রপাচারের জন্য জেলা সদরের দিকে কিংবা ঢাকামুখী হতে হয়। অর্থ ও সময়ের আধিক্যের কারণে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে উক্ত জনপদের লক্ষাধিক মানুষকে। বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা: মজিবুর রহমান ওই দুর্গম চরাঞ্চলে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রপাচারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ শুরু করেন। উপজেলা পরিষদের সহযোগিতা এবং জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের সমন্বয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রসূতিদের অস্ত্রপাচার শুরু করা হয়। জেলা সিভিল সার্জন ডা: মজিবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে ফিতা কেটে প্রসূতি মায়েদের জন্য অস্ত্রপাচার ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ।clip_image001জেলা সিভিল সার্জন ডা: মজিবুর রহমান জানান, অত্যন্ত দুর্গম চরাচঞ্চল মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে উপজেলা পরিষদের অনুদানের ২লাখ টাকায় ওটি টেবিল, ওটি লাইট, সাকার মেশিন, পাম্প মেশিনসহ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রপাচার শুরু করা হয়। প্রথম দিন উপজেলা কমপ্লেক্সটির সার্জন ডা: নাফিসা জেসমিন ও তার সহযোগী ডা: সুমা রানী দে,ডা: ফৌজিয়া আবুল ফায়েজ ও ডা: বিলকিসের সমন্বয়ে আকলিমা নামে এক প্রসূতির অস্ত্রপচার করা হয়। তিনি আরো জানান, একটি সফল অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যাত্রা শুরু করলো। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিনা পয়সায় প্রসূতিদের অস্ত্রপচারসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিবেন।
ডা: মজিবুর রহমান আরো জানান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭শটি পদ শূন্য রয়েছে। জনবলের অভাব না থাকলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আরো দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যেত। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বরেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমি বদ্ধ পরিকর।
এদিকে বিনা ব্যয়ে সরকারিভাবে অস্ত্রপাচার করতে পারায় প্রসূতি আকলিমা,তার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সজিব মিয়া আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, জেলা সদরে বা প্রাইভেট হাসপাতালে এ রকম অস্ত্রপাচার করতে হলে ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসায় আমাদের নবজাতকের জন্ম হলো। উৎফুল্ল নবজাতকের বাবা সজিব মিয়া জানান, বর্তমানে মা ও নবজাতক উভয়ই সুস্থ আছেন।
প্রসূতিদের জন্য অস্ত্রপচার ব্যবস্থার বিষয়টি এতদ্বঞ্চলের সাধারণ সরকারি স্বাস্থ্য সেবায় মাইলফলক হয়ে থাকবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেঘনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা পারভীন বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ প্রসূতিদের নিয়ে বেশ সমস্যায় ছিলো। প্রসূতিদের নিয়ে জেলা সদর কিংবা ঢাকামুখী হওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না। এতে সময় ও অর্থ বেশি লাগতো এবং সঠিক চিকিৎসা সেবারও নিশ্চিয়তা ছিলো না। এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অপারেশন থিয়েটার স্থাপিত হওয়ায় এতদঞ্চলে প্রসূতি মায়েদের জন্য তা অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। এখানে বিনা ব্যয়ে নিরাপদ সেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে তিনজন নবজাতক ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষজনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার তালিকায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।