‘ক্লিনটনও গ্যাস বিক্রি করতে বলেছিলেন, রাজি হইনি’

SHARE

hgtyওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,১৬ জুলাই :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিমি কার্টারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে বলেছিল। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয়েছিল।

শনিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ-এর ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গ্যাস বিক্রির প্রসঙ্গটি আবারো তোলেন শেখ হাসিনা।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির তদবিরে কথা শেখ হাসিনা আগেও বলেছিলেন।

শনিবারের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তার পেছনে কারণ ছিল, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে’।

গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন অ্যামেরিকান কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করে। তাদের ইচ্ছা ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে। আর ভারত এই গ্যাস কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আমাদের গ্যাস বিক্রি করার পক্ষে মত দিইনি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন বিল ক্লিনটন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তখন বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট। ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। আমি তাকে ওই জবাবই দিয়েছিলাম যে আগে আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েও একই অনুরোধ পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তখন একই প্রশ্ন। আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম।

আমার কথা ছিল, আগে আমার কত গ্যাস আছে জানতে হবে। আমার দেশের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। তারপর যদি অতিরিক্ত থাকে, তবেই আমি বিক্রি করব। তাছাড়া এই গ্যাস আমি বিক্রি করতে পারব না।

যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার অনুরোধে সন্দেহ হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাস আমার কত আছে, সেটা আগে আমাকে সার্ভে করে বের করতে হবে। তারা একবার সার্ভে করায়, কিন্তু এরপর আর করেনি।

আমি বারবার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা করেনি বলে আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল। তার মানে আমাদের দেশে কোনো গ্যাস নাই। তাহলে কেন বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে?

বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে দেশের স্বার্থহানিকর কিছু করবেন না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, আমি যা বলব, এককথাই বলব। ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ আমি অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। তাই আমি রাজি হইনি।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে লতিফুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন শেখ হাসিনা। পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেন খালেদা জিয়া।

ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, লতিফুর রহমানের বাসায় এক মধ্যাহ্ন ভোজে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান এবং বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে জিমি কার্টার ছিলেন।

‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার আসেন। তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক। সেখানে একই কথা (গ্যাস বিক্রি) ওঠে। আমি শুধু একটি কথাই বলে এসেছিলাম যে, আমার যে কথা বলার সেটা ঢাকায় বসেও বলেছি, ওয়াশিংটনেও বলেছি। কাজেই এটাই আমার কথা’।

আমি দেশ বেচার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার দেশের সম্পদ দেশের মানুষের। এটা আমি কাউকে দিতে পারব না।

লতিফুর রহমানের বাড়ি থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান চলে যাওয়ার পরও বিএনপি নেতারা সেখানে থেকে গিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

‘বিএনপির নেত্রী থেকে যান। তারপর যা হবার; তাদের মধ্যে বোধহয় সমঝোতা হয়। ২০০১ এর নির্বাচনে আমরা যেটা দেখেছি, ভোট আমরা বেশি পেয়েছিলাম, কিন্তু সিট কম পেয়েছি। সরকারে আসতে পারেনি’।