সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়ে ৫,৬০০ কোটি টাকা

SHARE

switzerland-national-bank_85617ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,নিজস্ব প্রতিনিধি,৩০ জুন : সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) এক বছরে বাংলাদেশি সঞ্চয় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সাল শেষে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৮৪.৪৭ টাকা হিসাবে)।

বৃহস্পতিবার সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে এ আমানতের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে ৪ হাজার ২৮৩ কোটি, ২০১৩ সালে তিন হাজার ১৪৯ কোটি এবং ২০১২ সালে ১ হাজার ৯৯১ কোটি, ২০১১ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে জমানো টাকার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছরই জমানো টাকার পরিমাণ বেড়ে চলছে।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকদের আস্থা ক্রমেই কমে আসছে। ফলে গত কয়েক বছর ধরে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের আমানতের পরিমাণ কমছে। এই অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে।

সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান এবং ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। আমানতের রাখার ক্ষেত্রে এ বছরও প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

গত ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা (বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা), ২০১৪ সালে ৪ হাজার ৪৫২ কোটি, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ২৭৩ কোটি, ২০১২ সালে ২ হাজার ১৪ টাকা, ২০১১ সালে ১ হাজার ৩৪০ কোটি, ২০১০ সালে ২ হাজার ৭৩ কোটি, ২০০৯ সালে ১ হাজার ৩১৯ কোটি, ২০০৭ সালে ২ হাজার ১৩৯ কোটি, ২০০৫ সালে ৮৫৬ কোটি, ২০০২ সালে ২৭৫ কোটি, ১৯৯৯ সালে ৩৮৭ কোটি এবং ১৯৯৬ সালে ৩৩৭ কোটি ছিল সুইস ব্যাংকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব বাংলাদেশি পরিচয় প্রদান করে টাকা জমা রেখেছেন এটি হল তার চিত্র। কিন্তু এর বাইরে যারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে টাকা রেখেছেন সে হিসাব এখানে নেই। ধারণা করা হচ্ছে, পরিচয় গোপনকৃত টাকা যুক্ত হলে এর পরিমাণ হবে আরও কয়েকগুণ।

এ ছাড়া এর বাইরেও বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা পাচার হয়ে থাকে। হুন্ডি ছাড়াও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। এমনকি ভুয়া এলসি খুলে কোনো কিছু আমদানি না করেও পুরো টাকা বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের আমানতকারীদের ২০১৬ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ ফ্র্যাংক। আর পাকিস্তানের দাঁড়িয়েছে ১৩৮ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক। এর মধ্যে ভারতের আমানত অর্ধেক কমেছে।  গত বছর দেশটির আমানত ছিল ১২০ কোটি ৬৭ লাখ সুইস ফ্র্যাংক।

সুইস ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে উন্নত দেশগুলো থেকে সুইচ ব্যাংকের সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। (প্রতি সুইচ ফ্রা ৮৪ টাকা ০২ পয়সা হিসাবে)। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৬৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উন্নত দেশগুলোর আমানতের পরিমাণ আরো কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকায়।

ইউরোপের দেশগুলো থেকে ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে আমানতের পরিমাণ কমলেও ২০১৬ সালে বেড়েছে। ২০১৪ সালে সুইচ ব্যাংকের ইউরোপের দেশগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৯০৮ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫২ কোটি টাকায়।

অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে সুইচ ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে ২০১৬ সালে। হিসাব অনুসারে ২০১৪ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুইচ ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ছিল ৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।

অথচ বাংলাদেশের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ জমানোর পরিমাণ ১৯ শতাংশ বেড়েছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে ধনীদের অর্থ গোপনে জমা রাখার জন্য খ্যাত সুইজারল্যান্ড। ৮০ লাখ মানুষের এ দেশটিতে ব্যাংক আছে ২৬৬টি। বিশ্বের বড় বড় ধনী অর্থ পাচার করে দেশটিতে জমা রাখে। ব্যাংকগুলোও কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। আগে সুইস ব্যাংকে জমা টাকার কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। এমন কী আমানতকারীর নাম-ঠিকানাও গোপন রাখা হতো। একটি কোড নম্বরের ভিত্তিতে টাকা জমা রাখা হতো। কিন্তু ২০০২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ব্যাপকভাবে কার্যকর করা হয়।

এরপর আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক জমা টাকার তথ্য প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ওই সময় থেকে বিভিন্ন দেশের জমা টাকার তথ্য প্রকাশ করছে। ওই প্রতিবেদনে কোন দেশের কত টাকা জমা আছে, সে তথ্য তারা প্রকাশ করছে।  কিন্তু আমানতকারীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করছে না। এ কারণে পাচারকারীদের ঠেকানো যাচ্ছে না।