আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’

SHARE

happy-amatullah_84625ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ বিডি ডট কম,বিনোদন প্রতিনিধি,২২ জুন : ছিলেন ঢালিউডের উঠতি নায়িকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেসার রুবেলের সাথে কেলেঙ্কারিতে টক অব দ্য কান্ট্রি। এবার আবার সারা দেশে আলোচনা সৃষ্টি করেছেন নাজনীন আক্তার হ্যাপী। এবার অবশ্য কোনো কেলেঙ্কারি নয়। তাকে নিয়ে লেখা বই ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ এখন পাঠকের হাতে হাতে। চলতি জুনে ‘হ্যাপি থেকে আমাতুল্লাহ’ নামের বইটি প্রকাশের পর এর হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। সারা দেশের পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে বইটি পুনর্মুদ্রণ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর প্রকাশক।

চাঞ্চল্যকর বইটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এএফপির বরাতে ডেইলি মেইল, ব্রিটবার্ট হয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে বইটির কথা, হ্যাপীর কথা। সেই সব প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে কীভাবে হ্যাপী উঠতি নায়িকা ও শোবিজের আলো ঝলমল জগত থেকে তাবলীগের সাথে সম্পর্কিত হলো, মাদ্রাসায় ভর্তি হলো।

‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটি থেকে জানা যায়, মাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে মিডিয়ার দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন হ্যাপী। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সিনেমার নায়িকা হবেন। বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় গভীর অনুশোচনার সাথে তার ছোটবেলা ও কৈশোরের স্বপ্নের কথা উঠে এসেছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে জেনেছেন মাত্র তিন বছর বয়স থেকেই কীভাবে টিভিতে বিভিন্ন গান দেখে নাচানাচি করতেন।

পরিবারের সকলের প্রিয়ভাজন মেয়েটি যখন মিডিয়ায় নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছিল সেটা তাদের গর্বের কারণ হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে যখন পর্দা করা শুরু করলেন তখন পরিবারে বেশ কঠিন অবস্থায় পরেন তিনি। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সেটাকে তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় হিসেবে উল্লেখ করেন। পরিবার থেকে বলা হতো ‘তুমি নামায পড়তে চাও তো নামায পড়ো। আমরা তো নামায পড়তে নিষেধ করছি না। কিন্তু এর পাশাপাশি তুমি মিডিয়াতেও কাজ করো। অনেক মানুষ তো নামাযও পড়ে; আবার মিডিয়াতেও কাজ করে।’

পরিবারের কথা না শোনাতে তার উপর নির্যাতন করা হয়েছে, ঘর থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে বোনের কথাতে অনেক কষ্ট পেতেন বলে জানান। ওই সময়টা নিয়ে বলতে গিয়ে হ্যাপী বলেন, ‘ওই সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসময়। আমি তখন সবসময় ভয়ে কুঁকড়ে থামকতাম যে, এই বুঝি কেউ এসে আমাকে মারবে।’

সেই কঠিন সময়ে তার মনে ‘দ্বীনের বুঝ ফুটতে শুরু করে’ বলে জানান হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। তখন মাদ্রাসায় পড়া এবং দ্বীনের ‘আলেমা’ হওয়ার সংকল্প জাগে বলে জানান তিনি।

মাদ্রাসায় চলে আসেন শিক্ষা গ্রহণের জন্য। সেখানে তিনি যে বেশ কঠিন অবস্থায় পড়েছিলেন সেগুলো নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন: ‘এখানে নতুন কিছু ভালো লাগার ব্যাপার ছিল; খারাপ লাগার মতোও কিছু ছিল। দেখা গেল, বাথরুমগুলো খুব নোংরা থাকত। অপরিচ্ছন্ন বাথরুম ব্যবহার করতে আমার খুব কষ্ট হত। আমি চোখ-কান বন্ধ করে ঢুকতাম। ওভাবেই বের হয়ে আসতাম। আবার বাথরুমে বেশিক্ষণ থাকা যেত না। দেখা যেত, আরেকজন এসে নক করছে। একটা বিব্রতকর অবস্থা ছিল।’

মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পন্ন করার ইচ্ছা সম্পর্কে সাক্ষাতকারগ্রহীতা প্রশ্ন করলে হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ জানান. ‘মাদ্রাসাতে আমি কারিয়ানা (কুরআন সহীহ) করেছি। আগে মুহাম্মদপুরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় ছিলাম। এখন মিরপুরের একটি মহিলা মাদ্রাসায় খুসুসি জামাতে ভর্তি হয়েছি। আরবি, উর্দু শিখছি।’

তিনি এখন দ্বীনের প্রচারক হতে ইচ্ছে পোষণ করেন। এরই মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বিয়ে করেছেন হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ। বিয়েটা কিভাবে হলো সেটা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন: ‘আমি যখন মাদ্রাসায় ছিলাম তখন তো আর ফেসবুক ইউজ করার সুযোগ ছিল না। মাসখানেক মাদ্রাসায় পড়ার পর আমি যখন বাসায় আসি তখন ফেসবুকে মাদ্রাসায় আটাশ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। আমার ‘উনি’ সেই পোস্ট পড়ে খুঁজে খুঁজে আমার মাদ্রাসায় চলে আসেন। সেখানে এসে তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ওই সময় আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম যে, যেন আমাকে একজন দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ে হয়।’

হ্যাপি তার বদলে যাওয়া জীবন সম্পর্কে বলেছেন, তিনি অতীত মুছে ফেলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি চলচ্চিত্র জগত ছেড়ে দিয়ে একটি মাদ্রাসায় কোরআন পড়ছেন। এখন কেউ তার আঙুলের নখও পর্যন্ত দেখতে পাবে না।