ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,রাজনীতি প্রতিনিধি,বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ || পৌষ ৯ ১৪৩২ :
গত ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনলাইনে দাবি প্রচার করা হয়েছে, ‘মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকে ওসমান হাদির খু*নি*র ১২৭কোটি টাকার লেনদেন!’
Advertisement
উল্লেখ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা ৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন উপদেষ্টা।

ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকে ওসমান হাদির খুনে প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিমের ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনের দাবি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, ১৪টি ভিন্ন ব্যাংকের ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ৫৩টি অ্যাকাউন্টে সব মিলিয়ে প্রায় ১২৭ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ২১ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ২১ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি। পাশাপাশি অভিযুক্ত ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৬৫ লাখ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার জন্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
এছাড়াও, অনুসন্ধানে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘বিডিনিউজ২৪’ এর ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ২১ ডিসেম্বরে প্রচারিত আরেক প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিআইডি বলছে, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় প্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বইয়ের তথ্য সিআইডি গুরুত্ব নিয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শুরু করে। “এতে দেখা যায়, অভিযুক্ত ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু চেক বইয়ে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ রয়েছে। চূড়ান্ত লেনদেন সম্পন্ন না হওয়া এসব রেকর্ডের সমষ্টিগত মূল্য প্রায় ২১৮ কোটি টাকা।” প্রাথমিক বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে সিআইডি বলেছে, অভিযুক্ত ফয়সাল ও তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ১২৭ কোটি টাকার বেশি অস্বাভাবিক লেনদেন সংঘটিত হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংক্রান্ত অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।”
পরবর্তীতে আরো অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৩ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফয়সালকে গ্রেফতার চেষ্টার পাশাপাশি তার স্ত্রী সামিয়া ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের অর্থের খোঁজে নামে সিআইডি। ১৪টি ব্যাংকে খোঁজ মিলে ৫৩টি অ্যাকাউন্টের যেখানে ২০১৭ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত আট বছরে লেনদেন করা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংক এশিয়ার আদাবর রিংরোড শাখাতেই সন্ধান মেলে সবচেয়ে বেশি ১৯টি হিসাবের। সেখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লেনদেন করেছে ফয়সাল ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

সময় টিভির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৮ বছরে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন হলেও হাদিকে হত্যার ৩ মাস আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বরে মিডল্যান্ড ব্যাংকের রূপনগর শাখার একটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আর ১ মাস আগে গত ৪ নভেম্বরে এনআরবিসি ব্যাংকের বেনারসিপল্লি উপশাখায় একটি ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা জমা দেয় ফয়সাল ও তার স্ত্রী। হাদি হত্যার ঘটনা ঘটার পূর্বে ৬৫ লাখ টাকা বাদে বাকী সব টাকাই তুলে নেয় তারা। এছাড়াও, সময় টিভির প্রতিবেদনে সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোঃ ছিবগাত উল্লাহর বক্তব্যের সংযুক্তি পাওয় যায় যেখানে তিনি জানান, ফয়সাল করিম মাসুদ ও অ্যাসোয়িয়েটদের বিভিন্ন ব্যাংকে ৫৩টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এতে ১২৭ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ, এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ফয়সাল করিম, তার স্ত্রী সামিয়া ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লেনদেন করা ১২৭ কোটি টাকা কোনো একক ব্যাংকে নয় বরং বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে। তার মধ্যে গত ৩ মাসে মিডল্যান্ড ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকে ৪ কোটিরও অধিক টাকা লেনদেন করা হয়েছে। তাছাড়া, সময় টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক এশিয়ার আদাবর রিংরোড শাখাতেই সন্ধান মেলে সবচেয়ে বেশি ১৯টি হিসাবের। সেখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকার লেনদেন করেছে ফয়সাল ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ, মিডল্যান্ড, ব্যাংক এশিয়া ও এনআরবিসি এই তিন ব্যাংকে অন্তত প্রায় ৫৪ কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে৷ সুতরাং, লেনদেন হওয়া মোট ১২৭ কোটি টাকার মধ্যে এই তিন ব্যাংক ব্যতীত লেনদেন হওয়া টাকার মধ্যে বাকী থাকে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা যা লেনদেন হয়েছে আরো অন্তত ১১টি ব্যাংকের মাধ্যমে। তাই, এ থেকে স্পষ্ট যে কেবলমাত্র ঢাকা ব্যাংকেই ১২৭ কোটি টাকার সব টাকা লেনদেন হওয়ার দাবি অযৌক্তিক। তাছাড়া, ঢাকা ব্যাংকে আদৌ কোনো টাকা লেনদেন করা হয়েছে কি না তাও জানা যায়নি।
Advertisement

সুতরাং, ‘মির্জা আব্বাসের ঢাকা ব্যাংকে ওসমান হাদির খুনির ১২৭ কোটি টাকার লেনদেন’ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।



