(ভিডিও)কিশোরগঞ্জে বিলাতি ধনিয়া পাতায় লাভবান কৃষক

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি,মঙ্গলবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ১৭ ১৪৩২ :

বিলাতি ধনিয়া বা বন ধনিয়া বা চাটনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Eryngium foetidum (এরিঞ্জিয়াম ফোটিডাম)। এটি ‘কুলান্ট্রো’ নামেও পরিচিত এবং এর সুগন্ধি পাতা চাটনি ও অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই পাতা। ভালো ফলন, বাজারে প্রচুর চাহিদা এবং ভাল দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। কৃষি বিভাগ জেলার সব উপজেলায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে।

Advertisement

 

কিশোরগঞ্জের সদরসহ ১৩ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা। ক্ষেতে থাকা এ পাতার দৃশ্য দেখতেও মনোরম। গেলো কয়েক বছর ধরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। এই পাতার ফলন পাওয়া যায় নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত কৃষকরা আগস্ট মাসে জমিতে বীজ বপন করেন।

 

কিশোরগঞ্জে চলতি বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়ার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৫ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকার বেশি।

 

বিলাতি ধনিয়া পাতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় চাষিদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এই ধনিয়া পাতার।

করিমগঞ্জ উপজেলার চরসুতারপাড় গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন ভূইয়া বলেন, “আগে তো বুঝতাম না এই পাতার রহস্য। প্রথমে নিজেরা খাওয়ার লাইগ্যা (জন্য) বাড়ির আশ-পাশেই বীজ বুনন করতাম। আর অহন দেখি, বাজারে এর অনেক চাহিদা। তাই ব্যবসার লাইগ্যা (জন্য) ক্ষেত্রে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ শুরু করছি। এটা খুবই লাভজনক, চার পাঁচ বছর ধইরাই করতাছি। আমার চাষ দেইখ্যা (দেখে) অনেকেই চাষ শুরু করছে।”

 

বিলাতি ধনিয়া পাতার আঁটি বাঁধায় ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা


তিনি আরও বলেন, “এই পাতা চাষের সুবিধা হলো-এটা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। ব্যাপারী এসে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যায়। এবার তিন একর জমিতে এ পাতা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা, আশা করছি, ৬ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হবে।”

Advertisement

প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

 

সদর উপজেলার কলাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, “আমি প্রথমে চার শতক জমিতে ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলাম। দেখলাম, লোকসান নাই। খুব ভালো লাভবান হয়েছি। এবার ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছি, খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। বিক্রি হয়েছে চার লাখ টাকার। বাকি ধনিয়া পাতা বেপারিরা এসে নিয়ে যাবেন।”

সবজি ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বিলাতি ধনিয়া পাতার প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। আমরা সরাসরি কৃষকের ক্ষেতে চলে যাই, সেখান থেকেই দরদাম করে ধনিয়া পাতা কিনি। এই পাতা ক্ষেত থেকে তুলে, ধুয়ে, বান্ডিল করে এবং বস্তায় ভরে ঢাকার কাওরান বাজার নিয়ে বিক্রি করি। এছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট নিয়ে যাই। এ পাতার খুব চাহিদা।”

 

ক্ষেতে থাকা বিলাতি ধনিয়া পাতা


তিনি বলেন, “বাজারে এই পাতা ২০০-২৫০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। তবে, সময়ের হিসেবে বাজারে এই পাতার দাম ওঠা-নামা করে।”

Advertisement

 

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিরুজ্জামান বলেন, “মাঠ পর্যায়ে কৃষকের পাশে থেকে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষের জন্য উৎসাহ এবং সহযোগীতা করে যাচ্ছি আমরা। এই বিলাতি ধনিয়া পাতা কৃষক তার ঘরের আশপাশে চাষ আগে করতো। আমরা তাদের পরামর্শ দিয়ে জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাচ্ছি। তারা খুব লাভবান হচ্ছে। আমরা তাদের পাশে থেকে পরামর্শসহ সার, বীজ দিচ্ছি। উঁচু জমিতে চাষযোগ্য এ ধনিয়া পাতার প্রতি শতাংশে বীজ লাগে ১০০ গ্রাম।”

পানিতে ধুয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় বিলাতি ধনিয়া পাতা


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাদিকুর রহমান বলেন, “বিলাতি ধনিয়া পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপাদেয় একটি উদ্ভিদ। যা মানুষের রক্তচাপ কমায়, রক্তের কোলস্টরল কমায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাবার হজমে সহায়তা করে। প্রতি বছরই কিশোরগঞ্জে এই পাতার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু, এ ফসলটি খুবই লাভজনক, তাই সামনে এর চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

জমি থেকে বিলাতি ধনিয়া পাতা তুলছেন কৃষক ও শ্রমিকরা