ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,পাংশা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার ২৫ নভেম্বর ২০২৫ || অগ্রহায়ণ ১০ ১৪৩২ :
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে রাজবাড়ীর পাংশায় ভেজাল আখের গুড় তৈরি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা পা দিয়ে চিনির সঙ্গে রং, সোডা, ফুড কালার ও ফিটকিরিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করছেন গুড়। এই গুড় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Advertisement
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও বন্ধ হয়নি ভেজাল গুড় তৈরির কারখানাগুলো। এই গুড় বাজারজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে ডাঙ্গীপাড়া গ্রামে শেখ আলমাছ নামে এক ব্যক্তি গড়ে তুলেছেন ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ভেজাল গুড়ের কারখানা। শেখ আলমাছ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে বছরে আড়াই লাখ টাকা চুক্তিতে পাঁচ বছরের জন্য জায়গাটি ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা।
সরেজমিনে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্যাঁতসেঁতে, নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। কারখানার একটি নোংরা ও ময়লাযুক্ত হাউসের মধ্যে পচা গুড় ঢেলে তাতে দুজন শ্রমিক ঘামযুক্ত শরীরে নেমে পায়ের সাহায্য চিনি, রং ও কেমিক্যাল মেশানোর কাজ করছেন। কারখানার মধ্যে ফ্যান না থাকায় দুই শ্রমিকের শরীর দিয়ে টপটপ করে ঝড়ে পড়া ঘাম পড়ছে গুড়ের মধ্যে। এছাড়াও মশা, মাছি, তেলাপোকা, টিকটিকি এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করছে।

Advertisement
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫

একই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের নামবিহীন অপর একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সাজানো আটার বস্তা। এছাড়াও সাজানো রয়েছে গোখাদ্য চিটাগুড়, কাপড়ের বিষাক্ত রং, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানো এক ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা নির্দ্বিধায় তৈরি করছেন গুড়। এসব মানুষের না পশুর খাদ্য দেখে বোঝার উপায় নেই।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের ভেজাল গুড় কারখানার মালিক শেখ আলমাছ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়েই গুড় তৈরি করছি। আমার গুড়ের মধ্যে কোনো অস্বাস্থ্যকর ভেজাল জিনিস মেশানো নেই। তিনি গুড়ের মধ্যে যে ফুড কালার ও চিনি ব্যবহার করেছেন তা স্বাস্থ্যসম্মত বলে দাবি করেন।
কারখানাটির অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে শেখ আলমাছ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা হয়েছে। নিয়ম মেনেই আমি ব্যবসা করছি।
ভেজাল গুড় কারখানার কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, গুড়ে চিনি, রং, সোডা, ফিটকিরিসহ নানান ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের কিছু করার নেই কারণ আমারা এখানে টাকার বিনিময়ে কাজ করি। কাজ না করলে খামু কী। মালিক যেভাবে করতে বলেন আমরা সেভাবে করি। কিন্তু জেনেশুনে আমরা নিজেরা এই গুড় খাই না।
বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. রমজান আলী ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমকে বলেন, আমরা জানি কারখানাটিতে ভেজাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কারখানার নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। অন্য কোনো নামে নিয়ে যদি কারখানা পরিচালনা করে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেনেটারি ইন্সপেক্টর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. তৈয়বুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোপূর্বে ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বার দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যেভাবে ভেজাল দিয়ে গুড় বাজারজাত করা হচ্ছে, এই গুড় খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে মানুষ। ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
Advertisement

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কমকে বলেন, গত বছর আমরা ভেজাল গুড় তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে কারখানার মালিকদের জরিমানা করেছিলাম। এখন সেই কারখানাগুলো আবার ভেজাল গুড় তৈরি করছে কিনা বা নতুন করে আবার কোনো কারখানা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। যদি কেউ ভেজাল গুড় তৈরি করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



