দিনের পর দিন লড়াই করে টিকে থাকা খালগুলোও এখন অস্তিত্ব সংকটে। ছবি ভিডি ও থেকে নেয়া
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম ((ভিডিও),ঢাকা প্রতিনিধি, শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ || আশ্বিন ৪ ১৪৩২ :
জলাশয়ের নগরী ঢাকা এখন কংক্রিটের জঞ্জাল। অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে অনেক খাল। দিনের পর দিন লড়াই করে টিকে থাকা খালগুলোও এখন অস্তিত্ব সংকটে। মাঝে মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পরিষ্কার ও উচ্ছেদের কার্যক্রম দেখা গেলেও পানি প্রবাহের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
গেল ২৩ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের হাইক্কার খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ওই সময় একটি দোতলা ভবন পুরোপুরি, একটি ভবনের আংশিক ও বেশ কয়েকটি টিনের ঘর ভেঙে দেয়া হয়। তবে অভিযানের প্রায় ৬ মাস পরও শুরু হয়নি খননের কাজ। এখনও রয়েছে খালের ভরাটকৃত মাটি, ছড়িয়ে আছে ভবন ভাঙার আবর্জনাও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শুধু ভবন আর স্থাপনা ভাঙতে দেখেছেন। তবে খাল খনন বা পরিষ্কারে সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ তাদের চোখে পড়েনি।
ঢাকা দক্ষিণের ধোলাইখাল, কেবল নামেই রয়ে গেছে। ব্যস্ত সড়ক, দুই পাড়ের দোকানপাট আর বাড়িঘর দেখে বোঝার উপায় নেই তিন দশক আগেও এখানে চলেছে নৌকা। ঐতিহ্যবাহী এই খালটির অবশিষ্ট এখন সিএমবি বক্স কালভার্ট। লোহার পুল থেকে মিল ব্যারাকের পাশ ঘেঁষে খালের অংশ থাকলেও ধোলাইখাল বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
এই খালের এক প্রবীণ মাঝি জানান, একসময় ৫ পয়সা করে নৌকা পারাপার করেছেন। কিন্তু দিনে দিনে দখল হয়ে খাল এখন ছোট হয়ে গেছে।
দক্ষিণের আরেক খাল জিরানি টিকে আছে ঠিকই তবে প্রায় নিষ্প্রাণ। কোথাও কোথাও প্রবাহ থাকলেও আবর্জনার চাপে বেশিরভাগ জায়গায়ই পানি আবদ্ধ। দুর্গন্ধ আর মশার উপদ্রবে নাকাল অবস্থা এলাকাবাসীর।
Advertisement
স্থানীয়রা বলছেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন নাম মাত্রে জমে থাকা দু-একটি পলিথিন পরিষ্কার করে। কিন্তু পানি প্রবাহের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় আজ পর্যন্ত।
উত্তর সিটির আগারগাঁওয়ে যে খালটি কোনোমতে টিকে আছে সেটির অবস্থাও বেহাল। স্থানীয়দের কাছে বিএনপি বাজার খাল নামে পরিচিত এই খালটি মূলত কল্যাণপুর খালেরই অংশ। কল্যাণপুরের দিকে কিছুটা প্রশস্ত থাকলেও তা সংকুচিত হয়ে অর্ধেকে নেমেছে পলি জমে।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসির ২৩-২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় খাল আছে মোট ৬৪টি। তাদের হিসাবে, সাম্প্রতিক সময়ে দখল ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঢাকার জলাশয়ের অন্তত প্রায় ১২০ কিলোমিটার জলপথ হারিয়ে গেছে।
এদিকে, দুই সিটি করপোরেশনের হিসেবে ঢাকায় খাল আছে ৪৬টি। তবে, বাস্তবে এর বেশিরভাগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল উদ্ধার আর সংস্কারে সিটি করপোরেশনগুলোর তৎপরতা যেন ব্যয়বহুল নানা প্রকল্পের ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ!
Advertisement
আবশ্যক
প্রতিটি উপজেলায় সংবাদদাতা আবশ্যক। যোগাযোগ ০১৭১৪৪৯৭৮৮৫
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, আগে নেয়া কিছু প্রজেক্ট আমরা দেখেছি বাস্তবায়ন করা খুব জটিল। সেক্ষেত্রে ডিপিবি সংশোধন করে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য আমরা সেগুলো হাতে নিয়েছি।’
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘তিনটি খাল উদ্ধারে এরই মধ্যে প্রজেক্ট পাশ হয়েছে। এগুলো হলো- সাংবাদিক কলোনি, বাইশটেক এবং এভিয়েশন খাল। এগুলোর দুপাশে ফুটপাতও করে দেয়া হবে, যাতে কেউ দখল করতে না পারে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘পূর্বে যারা খাল দখল করেছে তাদের শাস্তি দেয়া যায়নি। যার ফলে
Advertisement
খাল দখল করলে শাস্তি পাওয়া যায়-এই দৃষ্টান্তটা তৈরি হলো না। গত পাঁচবছর আগে আমাদের এত কিলোমিটার খাল ছিল, এখন এত কিলোমিটার খাল উদ্ধার করেছি। এই পরিসংখ্যানও কেউ দিতে পারে না।’
প্রকল্প কেন্দ্রিক জটিলতা থেকেও বেরিয়ে আসার তাগিদ এই বিশেষজ্ঞের।