(সিলেটে পাথর রক্ষায় যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে )
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সিলেট প্রতিনিধি, বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫ || শ্রাবণ ২৯ ১৪৩২ :
পাথর লুটপাটে অস্তিত্ব সংকটে পড়া সাদাপাথর পর্যটন স্পট নিয়ে এখন প্রশ্নের শেষ নেই। কেন সাদাপাথর রক্ষা করা সম্ভব হলো না? এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদেরও। মানবজমিন’-এর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকালে তাকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজেও থমকে যান। পাল্টা প্রশ্ন করেন- ‘এখন কী করা উচিত?’ যেন তিনি জেনেও কিছুই জানেন না। তবে তার শেষ কথা হলো- ‘সাদাপাথর রক্ষায় সিলেটের প্রশাসনের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। আমাদের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেগুলো ফ্রুটফুলি হয়নি।’ এখন কী করা উচিত- এ প্রশ্নের জবাব তিনি নিজেই দিয়ে বলেন- ‘আমি সভা ডেকেছি। দেখি কী করা যায়।’
Advertisement
জেলা প্রশাসকের কথায় বোঝা গেল- সাদাপাথর লুটপাট হওয়ার পর তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হলো এখন আর সভা ডেকে কী লাভ, যা হওয়ার তো তা হয়েই গেছে। শেষ মুহূর্তে পাথরখেকোরা যে কাজটি করেছে সেটি হলো- তারা মাটি খুঁড়ে পাথর নিয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে যান্ত্রিক পদ্ধতি। সাদাপাথরের বালু খুঁড়ে ফেলায় নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি একটি পর্যটন স্পট। বালু খুঁড়ে ফেলায় বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। পরবর্তীতে সেখানে চোরাবালি হতে পারে। আর চোরাবালিতে ডুবে প্রাণ যেতে পারে মানুষেরই। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন- বাপার সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সাদাপাথর লুটের দায় ইউএনওসহ স্থানীয় প্রশাসন এড়াতে পারেন না। যেহেতু ইউএনও কার্যক্রম দেখেন জেলা প্রশাসক, সুতরাং তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা লুট বন্ধে শুধু গাফিলতিই করেননি, এই লুটে তাদের যোগসাজশ রয়েছে মনে করা হচ্ছে। আর এটি মনে করার বহু কারণও রয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটন স্পট সাদাপাথরের পাথর লুট করে তো হাওয়ায় উড়িয়ে নেয়া হয়নি। এ পাথর লুট করে হয় নদী পথে, নতুবা সড়ক পথে পাচার করা হয়েছে। অথবা খোলা জায়গায় নিয়ে পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এই পাথরগুলো রক্ষায় প্রশাসন চাইলে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি করেননি। এদিকে, সিলেটের সাদাপাথর লুট এই মুহূর্তের বার্নিং ইস্যু। পাথর লুটের ফলে দেশের অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি পর্যটন স্পটের অপমৃত্যু হতে যাচ্ছে। আর এই লুটের দৃশ্য দেখে হাহাকার চলছে। পাথর লুটে কোম্পানীগঞ্জের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান পাথর লুটপাটে প্রশাসনের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘যখন পাথর লুটপাট হচ্ছিল তখন আমাদের তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই তখন নানাভাবে আমাদের দিকে চোখ রাঙান। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘পাথর লুটের দায় যেমনি প্রশাসনের আছে তেমনি আছে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও। লুটপাটের সময় প্রশাসন সম্পূর্ণ নীরব ছিল। কোনো কার্যক্রম চালায়নি। প্রশাসনের তরফ থেকে তখন জানানো হয়; হাজার হাজার মানুষ পাথর লুট করছে তাদের ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল ছিল না। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসন সেক্ষেত্রে সিলেট বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোগিতা নিতো পারতো। কিন্তু সেটি না করে তারা নীরবই থাকেন। আর রাজনীতিবিদরাও তখন এগিয়ে আসেননি। নিচ্ছে, নিয়ে যাক- এমন মনোভাব ছিল সবার।’