কলকাতায় ‘মিনি বাংলাদেশে’ হাহাকার অব্যাহত, ক্ষতি এক হাজার কোটি টাকা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কলিকাতা প্রতিনিধি, সোমবার   ০৪ আগস্ট ২০২৫ ||  শ্রাবণ ২০ ১৪৩২ :

এক বছর আগেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ ছিল শহরের খাদ্য, আতিথেয়তা এবং মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র। কিন্তু ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তখন এই এলাকাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশি পর্যটকদের আগমন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। এক বছর পরেও, এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এখনও এই অস্থিরতার প্রভাব অনুভব করছেন। এক বছরে এখানকার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে ১০০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি।

 

সোমবার (৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ মার্কেট এলাকার কাছে অবস্থিত ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট মারকুইস স্ট্রিট ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। এই এলাকায় গড়ে ওঠা সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো কাস্টমার মূলত বাংলাদেশিরা। এখানে সাশ্রয়ী হোটেল, ‘ওপার বাংলা’ খাবারের রেস্তোরাঁ, প্রধান রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনালের নৈকট্য এবং চিকিৎসা সুবিধার কারণে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। মাত্র এক বছর আগেও, এটি এমন একটি এলাকা ছিল, যেটি ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতো। কিন্তু এখন, একসময়ের ব্যস্ততম স্থানের রাস্তাগুলো নীরব।

Advertisement

 

বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী সমিতির একটি রক্ষণশীল অনুমান অনুসারে, এক বছরে ‘মিনি বাংলাদেশ’-এর ক্ষতি ১,০০০ কোটি টাকারও বেশি, অনেকে বলছেন যে প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, “হোটেল, রেস্তোরাঁ, খুচরা বিক্রয়, ভ্রমণ সংস্থা, মুদ্রা বিনিময়, চিকিৎসা সেবা এবং পরিবহন খাতে প্রতিদিন ৩ কোটি টাকার ব্যবসা হতো। যদি আমরা নিউ মার্কেট এবং বড়বাজারের ক্ষতির হিসাব যোগ করি, তাহলে মোট ক্ষতি ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি হবে।”

 

এই এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থানীয় গ্রাহকদের উপর নির্ভর করছে। মার্কুইস স্ট্রিটের একটি ভ্রমণ সংস্থার ম্যানেজার প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “এক বছর আগেও একসঙ্গে একাধিক বাস পর্যটক নিয়ে আসত, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া যেত না। এখন কয়েকদিন ধরে একজনও পর্যটক আসেন না।”

 

মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা, রেস্তোরাঁ এবং হোমস্টে ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কুইস স্ট্রিটের কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মোহাম্মদ ইন্তেজার বলেন, “আমরা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

Advertisement

ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশি পর্যটক সংকটের পর থেকে এই এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট এবং মাঝারি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলো এখন খুব কম বাজেটে চলছে। রাধুনি রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, “ব্যবসা ২০ শতাংশ এ নেমে এসেছে, এটা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা কোনোমতে টিকে থেকে পরিস্থিতি ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।”

ঢাকার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এই এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্য দ্বিতীয় বড় ধাক্কা। এর আগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ও এই এলাকা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। একজন রেস্তোরাঁ মালিকের ছোট ভাই বলেন, “মহামারীর পর ব্যবসার উন্নতির আশা করে আমাদের অনেকেই প্রচুর বিনিয়োগ করেছিলেন। আমরা ব্যবসা সংস্কারের জন্য ঋণও নিয়েছিলাম। এই অস্থিরতার আগে ব্যবসা ভালোই চলছিল। অস্থিরতার কারণে ব্যবসা আবার ডুবে গেছে। আমার বড় ভাই মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমাদের প্রতি মাসে ১.৫ লাখ টাকার ইএমআই দিতে হচ্ছে, কিন্তু আয় প্রায় নেই।”

Advertisement

https://www.youtube.com/live/E9fMBkbJ3-M?si=k2Ro-HFkcInWkNQ

 

বড় ব্যবসার পাশাপাশি, পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। হোমস্টে পরিচালক, রান্না করা খাবার সরবরাহকারী, ট্যুর গাইড এবং হোটেল কর্মী, রাঁধুনি, ড্রাইভার ও খুচরা দোকানের কর্মচারীদের জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, “মহামারীর পর চাহিদা বাড়ায় আমি দুটি বাণিজ্যিক গাড়ি কিনেছিলাম। ব্যবসা ভালো চলছিল, প্রায়ই গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিতে হতো। কিন্তু এখন মাসে মাত্র পাঁচ-ছয়টি বুকিং পাই, তাও স্থানীয়দের কাছ থেকে, যারা কম পয়সায় ভ্রমণ করতে চায়। আমাকে ইএমআই দিতে হচ্ছে।”