ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনি দালান প্রতিনিধি, সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫ || আষাঢ় ২৩ ১৪৩২ :
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে শুরু হওয়া তাজিয়া মিছিলে মানুষের ঢল নেমেছে। শোকাবহ এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বয়সের ও পেশার হাজারো মানুষ। শিশু, তরুণ, নারী ও বৃদ্ধ—সবার মুখেই শোকের ছাপ। বুকে মাতম আর হাতে নিশান নিয়ে তারা মিছিলে শামিল হয়েছেন।
Advertisement
রোববার (৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে এই তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বকশীবাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব হয়ে ধানমন্ডির দুই নম্বর সড়কে প্রবেশ করে। বিকেলের দিকে এটি মোহাম্মদপুরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশই কালো পোশাক পরে এসেছেন। তাদের হাতে ছিল প্রতীকী ছুরি, আলাম, নিশান, বেহেস্তা ও পাঞ্জা। অনেকের হাতে দেখা গেছে লাঠির মাথায় লাগানো ছোট তরবারি বা প্রতীকী অস্ত্র। মাতম করতে করতে তারা এগিয়ে যান ধীরে ধীরে। চারদিক জুড়ে ধ্বনিত হয়, ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’—এই শোকবাণী।
Advertisement
শোক মিছিলে অংশ নেওয়া জাফর আলী বলেন, এই দিনটি আমাদের জন্য খুব বেদনার। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন ও তার পরিবারকে যেভাবে শহীদ করা হয়েছিল, সেটি ভুলে যাওয়ার নয়। আমি প্রতিবছর এই মিছিলে অংশ নিই। আমি চাই, এই শোক ও ত্যাগের ইতিহাস আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকুক।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাসান আহমেদ বলেন, এই দিনেই ইমাম হোসাইন ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে শহীদ হন। আমরা শোক পালন করতে এসেছি। এই মিছিল আমাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ইতিহাসের অংশ।
আয়োজক হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মীর জুলফিকার আলী জানান, এই তাজিয়া মিছিল কয়েক শ বছর ধরে চলে আসছে। সময় বদলালেও এই শোকের মিছিল বদলায়নি। আমরা চাই, সব যুগের মানুষ যেন কারবালার ইতিহাস জানে—এই নির্মম ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পারে।
১০ মহররম, মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। ইয়াজিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি ও তার পরিবার আত্মত্যাগ করেন। সেই আত্মত্যাগ আজও মানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
Advertisement
https://www.facebook.com/share/p/1NT3RTcPAN
এই দিনটি স্মরণ করে শিয়া সম্প্রদায় প্রতিবছর আশুরার দিন তাজিয়া মিছিল করে থাকেন। তাদের বিশ্বাস, এই মিছিল শুধু শোক প্রকাশ নয়—বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ন্যায়ের পথে দৃঢ়তা ও সত্যের জন্য আত্মোৎসর্গের এক চেতনা।
মিছিলটি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। শৃঙ্খলা বজায় রেখে মিছিলটি এগিয়ে যায় নির্ধারিত পথে।
ঢাকার তাজিয়া মিছিলে মানুষের ঢল দূ*র্ঘটনা