ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সবার দেশ পত্রিকার সৌজন্যে, মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ || আষাঢ় ৩ ১৪৩২ :
আবারও বড় ধরনের ভাঙনের মুখে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এবার দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন জাপার সিনিয়র নেতারা। এ লক্ষ্যে আগামী ২৮ জুন দলটির ১০ম জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দলটি সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
Advertisement
দলের ভেতর থেকে গোলাম কাদেরকে সরিয়ে নতুন জাতীয় পার্টি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। দীর্ঘদিন তার ছায়াতলে থাকা নেতারাই এখন তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, কাদেরের নেতৃত্বে পার্টির গণতান্ত্রিক চর্চা ভেঙে পড়েছে, তিনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন এবং সরকারের সঙ্গে অস্বচ্ছ যোগাযোগ রেখেছেন।
গোলাম কাদেরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। পাশাপাশি সাবেক কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা ও শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ আরও অনেকে ‘গোলাম কাদের মাইনাস’ ফর্মুলায় একমত হয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন গড়তে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, জাপার অভ্যন্তরীণ বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০/ক ধারা, যার মাধ্যমে গোলাম কাদের যেকোনও নেতাকে যেকোনো পদে বহিষ্কার বা পদোন্নতি দিতে পারেন। এ ধারার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই বক্তব্য দিয়ে আসছেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি মন্তব্য করেন, এভাবে একনায়কতন্ত্র দলকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, প্রেসিডিয়াম সভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। গোলাম কাদের তার একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। এটি গণতন্ত্রবিরোধী।
গোলাম কাদেরকে বাদ দিয়েই আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে নতুন চেয়ারম্যান ও হাওলাদারকে মহাসচিব হিসেবে বিবেচনা করে কাউন্সিল করার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহমুদ বলেন, আমি যৌথ নেতৃত্বে বিশ্বাস করি। জাতীয় পার্টিকে জনগণের সামনে শক্তভাবে উপস্থাপন করতে চাই।
তবে এ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে জাপার আরেক কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এ বিভাজন আওয়ামী লীগের ইন্ধনে হচ্ছে। যারা কাদের সাহেবকে মাইনাস করতে চাইছেন, তারা অতীতে আওয়ামী দালালি করেছেন। কাদের সাহেবের নেতৃত্বেই আসল জাতীয় পার্টি থাকবে।
এর আগেও জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর দলটি ছয়বার বিভক্ত হয়েছে—হুদা-মতিন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, কাজী জাফর, নাজিউর রহমান, রওশন এরশাদ ও গোলাাম কাদেরকে ঘিরে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে পৃথক কমিটি গঠন করেছিলেন।
Advertisement
গোলাম কাদের ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর ভাইয়ের ওসিয়ত অনুযায়ী চেয়ারম্যান হন। কিন্তু দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে তিনি ব্যর্থ হন বলে অভ্যন্তরীণ সমালোচনা রয়েছে।
২৮ জুন অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় কাউন্সিলেই জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারিত হতে যাচ্ছে—গোলাম কাদের থাকছেন, না কি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আবারও একজন ‘মাইনাস’ হচ্ছেন।