ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় টিকটক ও মোবাইলে অন্য ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার বিরোধের জেরে নববধূ তাছলিমা আক্তারকে (২০) জবাই করে হত্যা করেছে স্বামী আবদুল হামিদ। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার দায় পুলিশের স্বীকার করেছে স্বামী আব্দুল হামিদ।
Advertisement

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত এলাকা থেকে বিজিবির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত তাছলিমা সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বাসুদেব গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছোট মেয়ে এবং আখাউড়ার হীরাপুর মধ্যপাড়ার সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী ছিলেন।
পুলিশ, বিজিবি ও নিহতের স্বজনরা জানায়, গত সাত-আট মাস আগে মুঠোফোনে সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের সঙ্গে তাছলিমার বিয়ে হয়। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে আসেন হামিদ। গত শুক্রবার দুই পরিবারের লোকজন হামিদ ও তাছলিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ওই দিন নববধূ তাছলিমাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরইমধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছুরিকাঘাত করে তাছলিমাকে হত্যা করে হামিদ।
Advertisement

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুছ মঙ্গলবার দুপুরে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান। বোনের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় হামিদ তাকেও ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনে হামিদের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে দুই পরিবার। বোনকে জীবিত স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে কিনা জানি না। বোনের মরদেহ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করলে আমাকেও ছুরি মেরে পালিয়ে যায়। আমি আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।’
Advertisement

এদিকে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর বড়মুড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সহায়তায় আটকের পর আখাউড়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল হামিদ জানান, তার স্ত্রী মোবাইল ফোনে টিকটক দেখত। অন্য ছেলের সঙ্গে চ্যাটিং করতো বলে স্ত্রীকে নিয়ে তার সন্দেহ ছিল। হামিদ মোবাইল ফোন দেখতে চাইলে স্ত্রী তাকে ধরতে দিত না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরইমধ্যে তাছলিমা ঘটনার দিন সকালে বাবার বাড়িতে যেতে চাইলে তাকে যেতে দেয়নি হামিদ। এসব ঘটনা থেকেই স্ত্রীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ঘটনার দিন দুপুরে বাজার থেকে ছুড়ি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরেন। দুপুরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে স্ত্রীকে গলা, পেট ও বাম হাতে আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই স্ত্রী তাছলিমার মৃত্যু হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায় হামিদ।
Advertisement

ঘটনা সম্পর্কে ২৫ বিজিবি (সরাইল) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরমান আরিফ, পিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করার চেষ্টাকালে টহলরত বিজিবি সদস্যরা আসামিকে আটক করেছে। পরে আখাউড়া থানায় তাকে সোপর্দ করা হয়।’
Advertisement

আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের ভাই আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নিহতের স্বামী আবদুল হামিদকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে আবদুল হামিদ। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

স্ত্রীর গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার স্বামী আবদুল হামিদ। ছবি: ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি)


