
এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর মাঠে নামে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার চন্দ্রিমা মডেল টাউন থেকে গ্রেফতার করা হয় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক স্টেনোগ্রাফার জহিরুল ইসলামকে। উদ্ধার করা হয় ২টি মোবাইল ফোন ও সিম। এবং আট/দশটি টেলিফোন ডাইরেক্টরি।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ জানান, জহিরুল ২০১১ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে অবসরে যান। এরপর তিনি বিভিন্ন সরকারি অফিসের নিম্ন ও মধ্যস্তরের কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেন। এলজিআরডি, পিডব্লিউডি ও কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তারা ছিল তার টার্গেট। বিভিন্ন সংস্থার টেলিফোন ডাইরেক্টরি থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দুর্নীতির নানা অভিযোগ আছে বলে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করেন। এজন্য জহিরুল ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্ট ব্যবহার করতেন।
সিআইডি জানায়, ধরা পড়ার দিনও জহিরুল তার মোবাইল নম্বর থেকে ৩০ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তার ফাঁদে ফেলতে কল করেছিলেন।
সিআইডি জানায় জহুরুল খুবই চতুর প্রতারক। নিজেকে বাঁচানোর সব কলা-কৌশল তার নখদর্পণে। অভিযোগ পাওয়ার পর সিআইডি মাঠে নামলেও শুরুতে ঘটনাটি ছিল ক্লু-লেস। বিকাশের বিভিন্ন নম্বর বিশ্লেষণ করে সিআইডির টিম মোহাম্মদপুর এলাকায় যায়। সন্দেহজনক বিকাশ একাউন্ট থেকে এক রিকশাচালকের টাকা তুলে নেয়ার সিসিটিভির ফুটেজ পায় সিআইডি। সিআইডি বুঝতে পারে, রিকশার আরোহী টাকা তুলতে কৌশলে রিকশাচালককে ব্যবহার করেছেন। সমস্যা হল সিসিটিভির ফুটেজে রিকশাচালক ধরা পড়লেও আরোহীর পায়ের জুতো ছাড়া আর কিছুই ধরা পড়েনি।
অজ্ঞাত আরোহীর জুতোর সূত্র ধরেই ওই এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সিআইডি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া সিসিটিভির ফুটেজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে পাওয়া যায় প্রতারক জহিরুলকে।
সিআইডি জানাচ্ছে, ধরা পড়ার পর অভিনব কায়দায় প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন জহিরুল ইসলাম। জহিরুল সিআইডিকে জানিয়েছেন, এভাবে প্রতারণা করে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। ফোন করে যাদেরকে বাগে পাওয়া যায় তাদেরকে ভয় দেখিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন জহিরুল। তবে সিআইডি বলছে, ২০১১ সালে অবসরে যাওয়ার পর থেকে প্রতারণা করছেন জহিরুল। প্রতিদিন ৩/৪ জনকে প্রতারণা করলেও গত আট, নয় বছরে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক। এবং সেভাবেই প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থের পরিমাণ বিশাল অংকের।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, প্রতারণা করা নিয়ে জহিরের কোনো অপরাধবোধ নেই। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিতে দেখেছেন। সে কারণে তিনি মনে করেন, সরকারি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের অর্থে তার অধিকার রয়েছে।
সিআইডি জানায়, মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে থাকেন জহিরুল। এলাকার ফিটনেস ক্লাবের সহ-সভাপতিও তিনি। তার অভিনব প্রতারণা ও মানসিকতার কথা জানে না তার পরিবারও। পরিপাটি পোশাকের কারণে তার বয়স যে ৬৭ বছর তা বোঝার উপায় নেই।
প্রতারণার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছে সিআইডি। সংস্থাটির ধারণা বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তাদের ফাঁদে ফেলতে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের কেউ না কেউ জহিরকে সহযোগিতা করত। তাদের ধরতে সিআইডির অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানা গেছে।